ঢাকা মেডিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তের রিপোর্ট নেওয়াকে কেন্দ্র করে হাসপাতালেরই দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২০জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
আজ রোববার হাসপাতালটির নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার প্যাথলজি বিভাগের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন প্যাথলজি বিভাগে ছুটে যান। পরে তিনি হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল মানুষ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে, আপনারা সবাই শান্ত হোন। কি ঘটেছে বিষয়টি আমরা দেখছি।’ পরিচালকের এই আহ্বানের পর সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা দুই পক্ষই শান্ত হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত নার্স মো. রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সাড়ে ১২টার দিকে আমার এক আত্মীয়ের রক্তের রিপোর্ট আনতে আমি প্যাথলজি বিভাগে যাই। নিয়ম অনুযায়ী আমি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এভাবে অনেকক্ষণ লাইনে থাকার পরও আমি রিপোর্ট পাইনি। না পেয়ে যিনি রিপোর্ট দেন তার কাছে গিয়ে আমি রিপোর্ট চাই। তখন পরিচয় জেনে তিনি বলেন, ‘‘আপনি ব্রাদার হলেই আপনার রিপোর্ট তাড়াতাড়ি দিব, এমন কোন কথা আছে?’’
মো. রাসেল অভিযোগ করে বলেন, ‘এরপর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে, রিপোর্ট প্রদানকারী ওই ব্যক্তি আমার জামার কলার ধরে মারধর করতে থাকে। আমার সাথে থাকা আরো তিনজন নার্স এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে প্যাথলজিতে থাকা অন্য স্টাফরা মিলে আমাদের সবাইকে মারে।’
তবে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ প্যাথলজি বিভাগের সামনে কোনো ধরনের লাইন ছিল না। এমনকি রাসেল লাইনেও দাঁড়াননি। রাসেল গিয়ে রক্তের রিপোর্ট চেয়েছে, তখনও রিপোর্ট আসেনি বলে আমরা শুনেছি। এই নিয়ে পরে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।’
প্যাথলজি বিভাগের তিন জন নার্সকে আটকে রেখে মারধর করছে এমন সংবাদ হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে অন্য নার্সরা মিছিল যোগে প্যাথলজি বিভাগে যান। ওই সময় প্যাথলজি বিভাগের গেট বন্ধ করে সকল সেখানে থাকা কর্মচারীরা তাদের আবারও নার্সদের মারধর করেন বলে অভিযোগ আছে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন নার্স আহত হয়েছে বলে দাবি করেন নার্সরা। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নার্সকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বরত রুবেল নামের একজন বলেন, ‘নতুন নিয়োগ পাওয়া নার্সদের আদব-কায়দা বলতে কিছুই নেই। তারা কয়েক জন প্যাথলজির এসেই মাস্তানি শুরু করেন। তারা বলেন, ‘‘আমাদের রিপোর্ট দেন, রিপোর্ট কই? এখনো আমাদের রিপোর্ট পাচ্ছি না।’’ তারা হাসপাতালে নার্স এই বলে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। এই চিল্লাচিল্লির একপর্যায়ে আমাদের প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আজিজ বেরিয়ে আসলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।’
এদিকে প্যাথলজি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও প্যাথলজির টেকনোলজিস্টরা একটি পক্ষ। অপরদিকে হাসপাতালে নার্সরা আরেকটি পক্ষ। এই দুই পক্ষের ভেতরে প্যাথলজি বিভাগে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই মারামারির ঘটনায় সময় রক্ত পরীক্ষা করতে আসা অনেকের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্যাথলজিতে যে ঘটনাটি ঘটেছে এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ঘটনার পর দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কারণ এটা একটি সেবামূলক জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে এই ঘটনা আমরা আশা করি নাই। এই ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি আমরা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’