লাল গরু কেনার আগেই সামিয়ার ডেঙ্গু, এখন কাঁদছেন বাবা
ছয় বছরের শিশু সামিয়া আক্তারের পছন্দ লাল গরু। দুই বছর ধরে তাকে সঙ্গে নিয়ে কোরবানির গরু কেনেন বাবা মাহবুব আলম (৩৫)। এক সপ্তাহ আগে গরু কিনতে হাটে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু তার আগেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় সামিয়া। মিষ্টি শিশুটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সামিয়াদের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। সামিয়াকে প্রথমে ভর্তি করা হয় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। কিন্তু গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালেই সামিয়ার পুরো শরীর ফুলে উঠতে শুরু করে। চাঁদপুর হাসপাতাল থেকে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বাবা মাহবুব আলম একাই সামিয়াকে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। গতকাল রাতে মেয়েকে ভর্তি করেছেন হাসপাতালটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। সব সময় মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। বসারও উপায় নেই। প্রতি বেডে দুজন করে ভর্তি! মেয়ের পা উঁচু করে ধরে রেখে অঝোরে কাঁদছেন মাহবুব আলম। মেয়ের প্লাটিলেট দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার পর শরীর ফোলা কমে গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে মাহবুব আলম এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন, ‘মেয়ে আমার লাল গরু পছন্দ করে। তার পছন্দ ছাড়া আমি গরু কিনি না। ৫ আগস্ট আমাদের গরু কিনতে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ ৪ তারিখেই মেয়ে পড়ল জ্বরে। ধরা পড়ল ডেঙ্গু। তাই গরু কেনা হলো না।’
মাহবুব আলম আরো বলেন, ‘গত পরশু একজনের কাছে লাল গরু কিনতে টাকা দিয়ে এসেছি। জানি না কিনছে কি না। মেয়ের অবস্থা ভালো না। তাই খোঁজ-খবরও নিইনি। আল্লাহ জানে, আমার মেয়ের কী হবে। মেয়ে লাল গরু কিনবে, ঈদ করবে, অথচ সে মৃত্যুর কোলে! আমি ভাবিনি কখনো এই পরিস্থিতি আমার সামনে আসবে।’
সামিয়ার বাবা বলেন, ‘মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আমি ভর্তি তার পায়ের কাছে। আর মেয়ের মা গ্রামে জ্বরে ভুগছেন। এমন ঈদ জীবনে কখনো আসেনি। কারো যেন না আসে। ঈদে পরবে বলে মেয়ের জন্য লাল জামা কিনে রেখেছি। এখন কে পরবে ওই জামা? গরু, ঈদ, জামা কিছুই দরকার নেই আমার। মেয়ে সুস্থ হলেই বাঁচি।’