ঢাকা ফাঁকা, কোথাও কোথাও যানজট
মেয়ের সঙ্গে ঈদ কাটাতে নাতি রাসেলকে (৮) নিয়ে ভোলা যাচ্ছেন বয়োজ্যেষ্ঠ মোসলেম মিয়া (৭০)। ঢাকার সিদ্দিক বাজারের একটি বাড়িতে দারোয়ানের কাজ করেন তিনি। হাতে একটি ল্যাগেজ নিয়ে শনিবার দুপুরে সিদ্দিক বাজার থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।
মোসলেম মিয়া বলেন, ‘জ্যাম আর জ্যাম। অলি-গলি দিয়া রিশকায়ও (রিকশা) যাওনের উপায় নাই। হাইটা হাইটা পা ব্যথা হইয়া গ্যাছে। আর পারতেয়াছি না। দেড় কিলো হইবো এমনে হাটতেয়াছি। মাইয়াডার লগে ঈদ করুম বইলা যায়তেয়াছি। নয়লে তো যাইতামই না।’
মোসলেম মিয়ার এই কষ্ট দেখে যানজটের গতি প্রকৃতি বোঝা যাবে না। রাজধানীর বংশাল থেকে অগণিত ঘরমুখো মানুষকে শনিবার হেঁটে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত যেতে দেখা গেছে। ওইটুকু পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে অন্তত আড়াই ঘণ্টা। বাস চলছে না বললেই চলে। কালে ভদ্রে একটি দুটির দেখা মেলে। ভরসা শুধু রিকশা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। অবশ্য মানুষ ভর্তি ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানও দেখা গেছে।
দুই শিশু বাচ্চা আর স্ত্রীকে নিয়ে হেঁটে সদরঘাট যাচ্ছিলেন শাহিন নামের এক ব্যক্তি। একবার রিকশায় উঠেও আবার নেমে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন। হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলছিলেন, ‘হাতে ব্যাগ, দুজনের কোলে দুটি বাচ্চা। দুই ঘণ্টা রিকশায় বসে থেকে আবার নেমে গেছি। বসে থাকার চেয়ে কষ্ট করে হাঁটি, তাও ভালো। কিছু সময় আগে হলেও মাকে দেখতে পাবো!’
এদিকে রাজধানীর গাবতলীতেও বেশ যানজট ছিল, তবে সদরঘাট এলাকার মতো নয়। উপচেপড়া ভিড়ের বেলায় দুটি জায়গাই এক।
শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষই বাসে উঠতে পারছেন না। পরিবহনের টিকেট তো নেই-ই। তাই ট্রাকে করে অন্তত পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন অনেকে। যানজটও একেবারে কম নয়।
শনিবার দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. হারুন জানালেন, ‘গতকালকের মতো অবস্থা আজও। যানজটও খুব। বিশেষ করে গরুর হাটের আশপাশে অনেক জ্যাম।’
সদরঘাট আর গাবতলী এলাকার অবস্থা এমন হলেও রাজধানীর অন্য এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা একেবারেই উল্টো। যানজট নেই, রাস্তায় মানুষও কম। স্বস্তির যাত্রা যাকে বলে।
শনিবার সকাল ১০টায় শুক্রবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ট্রান্স সিলভা বাসে করে প্রেসক্লাব পর্যন্ত যেতে সময় লেগেছে মাত্র ১১ মিনিট! বাসচালকের সহকারী সবুজ হোসেন বুঝতেই পারেননি তাঁর ভাড়া তুলতে কেন এত সময় লাগছে। দুই মাস ধরে বাসে কাজ করেন তিনি। বলছিলেন, ব্যাপারটা তাঁর কাছে অদ্ভুত লেগেছে।
সবুজ বাসচালক মো. ইব্রাহিমকে বললেন, ‘ভাড়া খাটতে আজ এতো দেরি হয় ক্যা মামা? সেই কলেজগেট থেকে ভাড়া কাটছি, এখন ল্যাব এইড আইসা পড়ছি। বুঝলাম না সময় কীভাবে গেল!’
এর জবাবে যাত্রী ইব্রাহিম সবুজকে বললেন, ‘অন্যদিন জ্যামে থাকো তো মামা, বুঝতে পারো না। ফাঁকা রাস্তায় চলছো এইডা মনে নেই মামা? মিরপুর এক থেইক্কা ভাড়া নিতে নিতে তো তোমার এই পর্যন্ত আসার কথা! এখন বুঝছো কেন দেরি হচ্ছে?’
রাজধানীর মতিঝিল থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে মাত্র ১৫ মিনিট। রাস্তায়ও মানুষ কম। গাড়ি-ঘোড়াও নেই। গুলিস্তান থেকে কারওয়ানবাজারে এসে নেমেছেন শামীম চৌধুরী। তিনি ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু দুই ঈদের সময়ই মনে হয় ঢাকাটা আমার। অন্য সময় সকলের।’