রাজধানীতে ডাব এখন সোনার হরিণ!
রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের কারণে বেড়ে গেছে ডাবের দাম। কচি ডাব যেন এখন সোনার হরিণ! ডেঙ্গুজ্বরের কারণে রাজধানীর সব জায়গায় ডাবের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাও ডাবের নামে আধা নারিকেলকে ডাব হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারের সামনে কথা হয় রোকসানা নামের এক ডাব ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, ‘একমাত্র মেয়ে নায়না (১২) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর কোতায়ালি থানাধীন ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি আছে। ডেঙ্গুর কারণে মেয়েকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, সরবত ও ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।’ কিন্তু পুরান ঢাকার কোথাও তিনি ডাব খুঁজে পাননি। অবশেষে ১২০ টাকা দিয়ে ডাব কিনেছেন তাও আধা নারিকেল!
ক্রেতা এনটিভি অনলাইনকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ডেঙ্গুর কারণে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একটি ডাব যদি ১২০ টাকা দিয়ে কিনতে হয় তাহলে বলেন আমরা কীভাবে চলব? এখন কোথাও ডাবও পাওয়া যাচ্ছে না। ডাব যেন এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে।’
রোকসানা বলেন, ‘ডাক্তার প্রতিদিন দুই লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন জ্বরের মুখে মেয়েকে সাধারণ পানি খাওয়াতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে ডাব খাওয়াতে হয়। প্রতিদিন মেয়ের পাঁচটি ডাব লাগে। তাহলে হিসাব করে দেখেন ডাবের পিছনে ৬০০ টাকা খরচ প্রতিদিন। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ কীভাবে এই টাকা জোগান দিব।’
এদিকে আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ড হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, সালাহ উদ্দিন হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ একাধিক হাসপাতালের সামনে কোনো ডাব বিক্রেতাকে দেখা যায়নি।
ইস্রাফিল নামের ব্যক্তি জানান, তাঁর স্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর টিকাটুলির সালাহ উদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি আছে। চিকিৎসক শরীরের লিকুইড (পানি) ব্যালেন্স রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে প্রতিদিন পাঁচটি করে ডাব খাওয়াতে হয়। কিন্তু এখন দেখছি কোথাও ডাবই পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল সকাল কিছু বিক্রেতা ভ্যানে করে আনলেও মুহূর্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর দাম আকাশছোঁয়া বলে দাবি করেন তিনি।
রায়সাহেব বাজার মোড়ে গনি মিয়া নামের এক ডাব বিক্রেতা বলেন, ‘ডেঙ্গুর লাইগ্গা (জন্য) এখন হাসপাতালে সব ডাব নিয়া যায়। আগের মতো এখন আর ডাব পাওয়া যায় না । তবে ডাবের দাম এখন বেশি।’
গনি মিয়া আরো বলেন, ‘এখন কচি ডাবের চাহিদা খুব বেশি। কিন্তু রোগীকে কচি ডাব খাওয়াতে না পেরে অনেকে নারকেলের পানি খাওয়ায়। এজন্য দোকানে ঝুনা নারকেল রাখছি।’
গনি বলেন, ‘ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমগো অনেক বেশি দিয়া কিইন্যা আনতে হয়। আগে যে ডাব ৪০ টাকায় বিক্রি করছি আর এখন সে ডাব ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। কারণ আড়তে ডাবের সরবরাহ কম।’
এদিকে কারওয়ানবাজারে কয়েকটি ভাসমান ভ্যানে ডাব বিক্রেতা দেখা গেলেও তাঁরা খুব উচ্চমূল্যে ডাব বিক্রি করছেন। সেখানে প্রত্যকটি ডাব ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারের ডাব বিক্রেতা মিজান বলেন, ‘পাইকারিতে অনেক বেশি দাম রাখে, তাই বেশি দামে আমাগো বিক্রি করতে হয়।’
মিজান বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের প্রতিদিন ডাব লাগে এ জন্য চাহিদা বেশি। চাহিদা বেশি বলেই মালের মজুদ কম।’
কাওরানাবাজারে হাকিম মোল্লা নামের এক ব্যক্তি ডাব কিনছিলেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাসায় একজনের ডেঙ্গু আর আরেকজনের জন্ডিস। দুজনেরই ডাব লাগে। থাকি ধানমণ্ডিতে । কোথায়ও কোনো ডাব নেই। তাই কারওয়ানবাজারে ডাব আছে জানতে পেরে অনেক ডাব কিনতে এসেছি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল হাসনাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রধান চিকিৎসা হলো শরীরের ফ্লুয়েড ব্যালেন্স রাখা। এজন্য বেশি পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি খেতে হবে। রাজধানীতে অনেক ডেঙ্গুর রোগী হওয়ায় প্রতিদিন ডাবের চাহিদা খুব বেড়েছে। আবার অনেক অসাধু ডাব ব্যবসায়ী ইচ্ছে করে ডাব মজুদ রেখে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।’
আবুল হাসনাত বলেন, ‘সরকার যদি ডাবের বিষয়টি বাজারে মনিটরিং করে তাহলে মানুষ সহজে কম দামে ডাব ক্রয় করতে পারবে।’