‘মুখে যতই বলি, বাস্তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে’
ঢাকায় প্রতিদিন নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাস্তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা সিটিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এই সংখ্যা আমরা যতটাই মুখে নিয়ন্ত্রণের কথা বলি না কেন, এখনো এটা নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এটা হলো বাস্তবতা।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বর্ধিত সভায় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারণা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় দলের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা তিন দিন তিনটি জায়গায়, প্রথমত ধানমণ্ডি এলাকায়, পরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, এরপর ফার্মগেট ও শান্তিনগর এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই কার্যক্রম চালিয়েছি। কর্মসূচিটি আমরা সিনসিয়ারলি এবং সিরিয়াসলি নিয়েছি। জনস্বার্থে, দেশের স্বার্থে এবং দলের স্বার্থে আমাদের নেত্রীর নির্দেশনায় এই কাজটি আমরা করব। আমরা নামকাওয়াস্তে দু-চার জায়গায় কর্মসূচি পালন করলাম, বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা হলো না, কর্মসূচি পালন হলো না। এই দায়সারা কর্মসূচির কোনো প্রয়োজন নেই। এতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রও বন্ধ হবে না, এডিস মশার উৎসমূল বন্ধ করতে পারব না। ডেঙ্গু জ্বরের যে ভয়ংকর বিস্তার এই বিস্তারও আমরা রোধ করতে পারব না।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে ঈদ, ঈদের সময় সিটি থেকে অনেকেই গ্রামবাংলায় ঘরমুখো হবেন। অনেকেই যাচ্ছেন, যাবেন। এখানেও এই ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারের একটা আশঙ্কা আছে। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের প্রথম কাজটি হচ্ছে এই সচেতনতা এবং সতর্কতা প্রচার করা। এই মশার প্রজনন ও বংশবিস্তার বন্ধের পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।’
ঢাকা শহরের মোট ১০৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা মাঠে নামায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ফটোসেশন করার জন্য এই অভিযান নয়। আমরা দেখতে চাই, ঢাকা সিটির প্রত্যেক ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং নেত্রী এটা জানতে চেয়েছেন। নেত্রী জানতে চেয়েছেন, কয়টা ওয়ার্ডে নেত্রীর নির্দেশনা পালন হয়েছে। ১০৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে হাত তুলেছেন কয়জন? এ সময় হাত গুনে দেখা যায় ১৩ জন কাউন্সিলর হাত তুলেছেন।’
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘যাঁরা করেননি, আমি চিহ্নিত করে লজ্জা দিতে চাই না। শেখ হাসিনার নির্দেশ মনে করতে হবে। যাঁরা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ আর এই ধন্যবাদ অব্যাহত থাকবে। যাঁরা করেননি, নেত্রী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রোগ্রাম না করলে কিন্তু অপ্রকাশিত থাকবে না। কাজেই প্রতিটি ওয়ার্ডে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান কর্মসূচি করবেন। ওয়ার্ডের নেতারা আছেন, আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। আপনারা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সহযোগিতা করবেন। নিজের কর্মস্থল নিজের অফিস আদালত, বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখবেন।’
ভয়ংকর এডিস মশা মন্ত্রী-এমপি-সাংবাদিক কাউকে ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এই এডিস মশা ভয়ংকর, এই এডিস মশা কারো চেহারার দিকে তাকায় না, আপনি কাউন্সিলর, আপনি কি নেতা, আপনি কি মন্ত্রী, এমপি, মেয়র কোনো দিকেই তাকাবে না। এডিস মশা সামনে পেলেই রক্ত খাবে, এমপির রক্ত খাবে, মন্ত্রীর রক্ত খাবে, নেতার রক্ত খাবে, কাউন্সিলরের রক্ত খাবে কাউকে ছাড়বে না। সাংবাদিকদেরও রেহাই নেই। সবাইকে সচেতন হতে হবে, সাবধান হতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নোংরা শহরের মধ্যে আমরা বিশ্বে চার নম্বরে, তাহলে কেন এডিস মশার প্রজনন হবে না? কেন বংশবিস্তার হবে না? আরো অনেক ভয়ংকর চিকুনগুনিয়ার মতো ব্যাধিতে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। ঢাকাকে ক্লিন করতে হবে, ঢাকাকে গ্রিন করতে হবে। আমাদের এবং প্রতিনিধিদের যৌথভাবে মাঠে নামতে হবে।’
‘মিডিয়া না থাকলে ডেঙ্গুকে গুজব বলে চালিয়ে দিত সরকার’— বিএনপির এমন বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি বলব মিডিয়া না থাকলে বিএনপি যে একটা রাজনৈতিক দল, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। মিডিয়া না থাকলে বিএনপি যে আছে, এটা বোঝার কোনো উপায় আছে? নির্বাচনে তারা ব্যর্থ, আন্দোলনে তারা ব্যর্থ। এত বড় বন্যা হয়ে গেল ছিটেফোঁটা দু-একটা জায়গায় গিয়ে ফটোসেশন করে শেষ। ডেঙ্গু অভিযানেও তারা নেই, মুখে মুখে আবাসিক প্রতিনিধি পল্টনের অফিসে বসে কথা বলছে। মিডিয়া না থাকলে আজকে জনগণ কীভাবে বুঝত এই দল যে আছে?’