ডেঙ্গুর কারণে বিচারকাজে স্থবিরতা
সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু জ্বর মহামারির রূপ নেওয়ায় ঢাকার আদালতের বিচার কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ডেঙ্গুর কথা বললেই, সহজে সময় দেওয়া হচ্ছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, এতে মামলার বিচারকাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আসামিপক্ষ জামিন শুনানির সময়, পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বলে জামিন চাচ্ছেন।
আজ রোববার ঢাকার ৯ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতের পেশকার মোহাম্মদ রিপন মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আসামি ও বাদীরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে আইনজীবীরা আদালতে সময়ের আবেদন করছেন। বিচারক মানবিক কারণে সেসব মামলায় সময়ের আবেদন মঞ্জুর করছেন।
৩০ নম্বর আদালতের পেশকার জহুরুল হক বলেন, আদালতে দায়ের করা বিভিন্ন নালিশী মামলায় বাদীর হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পর পর তিন বার বাদী আদালতে হাজিরা না দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৭ ধারা অনুসারে বিচারক মামলা খারিজের আদেশ দেন। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিচারকদের কাছে আইনজীবীরা ডেঙ্গুর কারণ দেখালেই সহজেই তা মঞ্জুর করা হচ্ছে।
জহুরুল বলেন, আসামিপক্ষে যেকোনো মামলায় হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুর কথা আদালতকে বললে আদালত সহজেই সময় মঞ্জুর করছেন।
বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সাবেক কৌঁসুলি ও ফৌজদারি আইনজীবী মনজুর আলম মঞ্জু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিগত বছরে চিকুনগুনিয়া বেড়ে যাওয়ায় আইনজীবীরা আসামি বা বাদীর চিকুনগুনিয়া হয়েছেন বলে আদালতে সময়ের আবেদন করতেন। অনেক সময় অনেক আসামি সুস্থ থেকেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে সময়ের আবেদন করতেন। আর আদালত মানবিক দিক থেকে তা মঞ্জুর করতেন।
আইনজীবী মনজুর বলেন, আদালতে যেহেতু বর্তমানে ডেঙ্গুর কথা বলে সময়ের আবেদন করা হচ্ছে, তাই আদালত বিশেষ মামলার ক্ষেত্রে আসামি বা বাদীর ডেঙ্গু হয়েছে এমন মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারেন। তাহলে সত্যিকারের অসুস্থ রোগীরাই এই সুযোগ পাবে। ঢালাওভাবে যাচাই-বাছাই না করে সময় মঞ্জুর করলে মামলার কার্যক্রমে স্থবিরতা চলে আসবে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক কার্যকরী পরিষদের সদস্য হান্নান ভূঁইয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ সময় মতো না হওয়ায় এমনিতেই বিচারকাজ শেষ হতে বছর পার হয়ে যায়। ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত থাকেন। সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসার পরে যদি বিচারক দেখেন আসামি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত, তখন সেই সাক্ষীকে ফিরে যেতে হয়। সে সাক্ষী আবার কবে আসবেন কেউ জানেন না। এতে মামলার কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। কেউ যদি সত্যিকারে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আদালতে মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করলেই সত্যতা জানা যাবে। তাহলে মামলার বিচারকাজে বাধা হবে না।