নওগাঁয় ৩০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, পাঁচজন রামেকে
সারা দেশের মতো নওগাঁ জেলায়ও বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত নওগাঁয় ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আরো পাঁচজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনালের হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রওশন আরা খানম জানান, নওগাঁয় শনাক্ত হওয়া ৩০ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ২৬ জনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। বাকি চারজন নওগাঁয় বসবাস করার সময় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নওগাঁয় ডেঙ্গু আক্রান্ত চারজন হলেন শহরের হাট-নওগাঁ এলাকার মাহবুব আলম (২০), সাবিহা আকতার (২০), সদর উপজেলার উল্লাসপুর গ্রামের রুহুল আমিন (১৯) ও দুবলহাটি গ্রামের আবুল কালাম আজাদ (৭০)।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সিফাইত জান্নাত তিথির বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চাকলা বক্তারপুরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। হঠাৎ করে গত ২৭ জুলাই গায়ে জ্বর, শরীর ও মাথাব্যথা এবং সঙ্গে বমি আরম্ভ হয়। পরীক্ষার পর ধরা পড়ে ডেঙ্গু। ঢাকার কেয়ার মেডিকেলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২৯ জুলাই বাড়িতে এসে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসায় হাসপাতাল থেকে স্যালাইন ও প্যারাসিটামল দেওয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বমি ও ১০৪ ডিগ্রির ওপর জ্বর থাকছে।
সিফাইত জান্নাত তিথি বলেন, ‘যা খাচ্ছি তা-ই বমি হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। গায়ে প্রচণ্ড জ্বর, কমছে না। চিকিৎসা চলছে। উন্নতির কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সিফাইত জান্নাতের মতো নওগাঁয় ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ রোগীর সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তরা ঢাকাতে কেউ পড়াশুনা করছে আবার কেউ আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের হাসপাতালে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রোগীদের আলাদা ঘরে রেখে মশারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
গত ২৭ জুলাই নওগাঁ সদর হাসপাতালে সদর উপজেলার তিলকপুর গ্রামের সুখি আক্তার (২০) নামের এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। সেদিনই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নওগাঁ থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে ২০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঢাকার মিরপুরে থাকি। ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছি। গত ২২ জুলাই রাত ১১টার দিকে সুস্থ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে নামাজ পড়তে উঠব কিন্তু শরীরে ব্যথায় আর উঠতে পারছিলাম না। সময় যতই যাচ্ছে শরীরে ব্যথা বাড়ছে ও জ্বর হচ্ছিল। পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজেটিভ আসছে। বাড়িতে এসে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে শরীরে ব্যথা রয়েছে।’
মান্দা উপজেলার তুরুগবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ লাইলি বেগম (৪০) বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ঢাকার শ্যামলীতে ভাগ্নির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। মশা কামড় দিয়েছে বুঝতে পারিনি। তিনদিন পর শরীরে ব্যথা ও সঙ্গে বমি। এর পর হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বাড়িতে এসে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। জ্বর কমছে না। বমি হচ্ছে।’
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রওশন আরা খানম বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো যন্ত্র ছিল না। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে ‘এনএস-১ ডিভাইস’ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পরীক্ষার পর ডেঙ্গু পজিটিভ আসায় সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য মূল হচ্ছে- স্যালাইন ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ আছে।’
ডা. রওশন আরা খানম আরো বলেন, ‘ডেঙ্গু মশা সাধারণ পরিষ্কার পানিতে জন্মে থাকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে পানি যাতে জমে না থাকে এজন্য সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।’