‘খালেদা জিয়া কিছুই খেতে পারছেন না, সুচিকিৎসা দরকার’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কিছুই খেতে পারছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।’
আজ শুক্রবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জিহ্বায় আলসার হয়েছে। গত এক সপ্তাহে তাঁর (খালেদা জিয়া) ওজনও কমে গেছে। তাঁর চার কেজি ওজন গত এক সপ্তাহের মধ্যে কমেছে। ইট ইজ ভেরি এলার্মিং।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশনেত্রীর খবর রাখি, খবর রাখার চেষ্টা করি। তাঁর এখন যে সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে- তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উনি কষ্ট পাচ্ছেন সেটা হচ্ছে- তার জিহ্বার মধ্যে আলসার হয়েছে যেটাকে টাং আলসার বলে। অন্যদিকে তার দাঁত শার্প (চোখা) হয়ে গেছে। সেটা যখন তার জিবে আঘাত করে তখনই তিনি কষ্ট পান। যার ফলে তিনি এখন কিছু খেতেও পারছেন না। এই বিষয়টা ধরার পড়ার পরে সেখানকার চিকিৎসকরা টুথ ব্রান্ডিং করেছিলেন যাতে শার্পনেসটা কমিয়ে এনেছিলেন। এখন তার দাঁতের শার্পনেস আরো বেশি করে দেখা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর দাঁতের চিকিৎসাটা বড় চিকিৎসা। তার রুট ক্যানেল করা দরকার, স্কেলিং করা দরকার, টুথ এসট্রাকংশ করা দরকার।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) ম্যাডামকে দেখলে এখন চিনতেই পারবেন না। উনি শুঁকিয়ে এ রকম হয়ে গেছেন। উনি খেতে পারছেন না, কিছুই খেতে পারছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তার পছন্দ অনুযায়ী দেশে অথবা বিদেশে যেখানে তিনি চিকিৎসা করাতে চান সেখানে তার চিকিৎসার করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিজিতে আনার পর আপনারা দেখেছেন যে, বেগম জিয়া হুইল চেয়ার ছাড়া মুভই করতে পারছেন না। প্রকৃত অবস্থা আরো ভয়াবহ। তিনি এখন বিছানা থেকে নিজে উঠতে পারেন না। তাকে দুজন হেলফ করে উঠাতে হয় এবং হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে টয়লেটে, ওয়াসরুমে বা খাবার টেবিলে নিতে হয়। আবার দুজনের সাহায্য নিয়েই তাকে শোয়া বা বিছানায় নিতে হয়। এটা অমানবিক।’
ফখরুল বলেন, ‘এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না যে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন, যে দুইবার বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং যিনি নিজে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তার দুই সন্তানসহ। আজকে চরম অমানবিক আচরণ তার সঙ্গে করা হচ্ছে। একজন প্রথম শ্রেণির সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির সঙ্গে যে আচরণ করা হয় তার সঙ্গে তার চেয়েও খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।’
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘বেগম জিয়াকে এখন সঠিক মতো তার যে খাওয়া সেগুলো ঠিকভাবে দেওয়া হয় না। তার যেসব ফল-মূল যেগুলো খাওয়া উচিত সেগুলো তিনি ঠিক মতো পান না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তার চিকিৎসা -এটা কোনো মতেই এখানে ( বিএসএমএমইউ) সম্ভব হচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের ব্যাপারটা দলের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করেছে। আমি বুঝতে পারি না দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই আচরণের উদ্দেশ্যটা কী? তাকে কী এই আচরণের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কি তাকে একেবারে জীবন অবসানের চেষ্টা করা। এই প্রশ্নগুলো তো মানুষের মধ্যে এসে যাচ্ছে। আপনারা দয়া করে এই বিষয়টাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে জনগণের সামনে, সরকারের সামনে তুলে ধরেন। যাতে এই নেত্রী, তিনি জনগণের নেত্রী তিনি ডিজার্ভ করে ভালো ট্রিটমেন্ট যেন পান। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা শিগগিরই তার মুক্তি চাই, যে মুক্তিটা তার প্রাপ্য। আজকে সরকার তার জামিনে প্রত্যেকটা বাঁধার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সরকার এই বাঁধাটা সৃষ্টি করছে।’