কবিরাজের নির্দেশের কথা বলে ধর্ষণ, পরে হত্যা!

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসা থেকে গত ৫ জুলাই এই অবস্থায় আয়েশা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি : এনটিভি

আয়েশা বেগম (২৮), একজন গৃহকর্মী। তাঁর এক যুগের সংসার ভাঙে দুই বছর আগে। স্বামী জসিম উদ্দিন আরেক নারীকে বিয়ে করেন। দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় থাকতেন আয়েশা। হঠাৎ করে স্বামীকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। প্রতিবেশী নাজমুল ইসলাম সেই সুযোগ নেন। ‘কবিরাজের নির্দেশ’-এর কথা বলে আয়েশাকে ধর্ষণ করেন নাজমুল। পরে খুনও করেন।

সেই নাজমুলকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আজ রোববার নাজমুলকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গোয়েন্দা বিভাগের গুলশান জোনাল টিমের উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

গোলাম সাকলায়েন জানান, আয়েশা বেগম যখন স্বামীকে ফিরে পেতে মরিয়া ঠিক তখনই নাজমুল ইসলাম তাঁকে বলেন, ‘এক কবিরাজ বাণ মারার কারণে আপনার স্বামী জসিম আবার বিয়ে করেছেন। এমনকি নিজের ছেলে মেয়েদের প্রতিও তাঁর কোনো টান নেই।’ আয়েশা বেগম তাঁর এই কথা বিশ্বাস করেন। স্বামীকে ফিরে পেতে আয়েশা বারবার নাজমুলের সঙ্গে  যোগাযোগ করতে থাকেন। পরে আয়েশা নাজমুলকে তাঁর ভাড়া করা বাসায় যেতে বলেন। একদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে নাজমুল তাঁর বাসায় ঢোকেন। বাসায় ঢুকে নাজমুল তাঁকে বলেন, ‘কবিরাজের নির্দেশ, স্বামীকে ফিরে পেতে হলে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে।’ এরপর আয়েশাকে ধর্ষণ করেন নাজমুল। কবিরাজের জন্য নেন দুই হাজার ৪০০ টাকা।

এরই মধ্যে আয়েশার স্বামী জসিম উদ্দিন টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। ওঠেন বোনের বাসায়। এই ঘটনারও সুযোগ নেন নাজমুল। তখন তিনি আয়েশাকে বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে কবিরাজের জন্য।’ আয়েশাও সেটা শুনে খুশি হয়। কিন্তু জসিম উদ্দিন আবার টাঙ্গাইল চলে যান। আর এতেই বাধে বিপত্তি!

উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন জানান, পরবর্তী সময়ে গত ৪ জুলাই দিবাগত রাতে নাজমুল পুনরায় আয়েশার কাছে যেতে চাইলে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আয়েশা নাজমুলকে বলেন, ‘আমার টাকা নিয়েছেন, আবার চরিত্রও নষ্ট করেছেন। এদিকে আমার বরও ফিরে এলো না। আমার টাকা ফেরত দেন, না হলে ভালো হবে না।’ তখন দুশ্চিন্তায় পড়ে যান নাজমুল। কী করবেন সেটা ভাবতে থাকেন।

এরপর ঘুমের ওষুধ নিয়ে আয়েশার কাছে যান নাজমুল। গিয়ে বলেন, “আপনার ছোট সতীন ‘বাধা বাণ’ মেরেছে আপনাকে। তাই কবিরাজ ওষুধ দিয়েছে খেতে।’ এরপর দুটি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন নাজমুল। তখন কবিরাজের কথা বলে পুনরায় ধর্ষণ করেন। স্বামীকে কবে ফিরে পাবেন, এই নিয়ে পুনরায় তাদের তর্ক হয়। তখন নাজমুল আয়েশাকে বুঝিয়ে বলেন, ‘সতীন যেহেতু বাধা বাণ মেরেছে, সেহেতু আমার সঙ্গে বাধা বাণ মারা অবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে।’

এরপর নাজমুল আয়েশার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরই মধ্যে ওষুধের ক্রিয়ায় অচেতন হয়ে পড়েন আয়েশা। তখন নাজমুল আয়েশার গলায় একটি কাপড় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

এরপর আয়েশার পরিবার ভাটারা থানায় আয়েশার স্বামী ও সতীনসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। পরে এই হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ নাজমুলকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে এর আগেও মৌখিকভাবে নাজমুল হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন।