ব্যাখ্যায় যা বললেন প্রিয়া সাহা (ভিডিওসহ)
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ‘ভয়ংকর’ অভিযোগের পর প্রকাশ্যে এসেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।
প্রিয়া বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘শারি’র পরিচালক। আজ রোববার ‘শারি বাংলাদেশ’-এর ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্পের কাছে নালিশের ব্যাখ্যা, ঘটনার পর নিজেরসহ পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয় তুলে ধরেন তিনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে প্রিয়া সাহা একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাঁর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তবে সেই সাংবাদিকের পরিচয় জানা যায়নি।
ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা এবং তার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি ভালো নেই। পরবর্তী অবস্থা আপনারা দেশে আছেন, প্রতিটি বিষয় আপনারা দেখছেন। প্রতিটা মুহূর্ত কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যম বা বিভিন্ন ব্যক্তি বা কোন পর্যায় থেকে, সে ব্যাপারে আপনারা খুব অভিজ্ঞ।
নিরাপদে আছেন নাকি কোনো সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, আমার পরিবার ভীষণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাসার সামনে কালকে তালা ভাঙতে চেষ্টা করা হয়েছে। কালকে আমার বাসার সামনে মিছিল করা হয়েছে। সব চাইতে বড় ব্যাপার হলো, আমার পরিবারের ছবি ছেপে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। কথা বলেছি আমি, তারা আমার ছবি দিতে পারত। কিন্তু আমার পরিবারের ছবি পত্রিকায় দিয়ে তাদের সবার জীবনকে বিপন্ন করে ফেলা হয়েছে। আপনি গিয়ে এলাকায় দেখেন, পত্র-পত্রিকায় দেখেন। কারণ তারা আমার কাজের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই কেউ যুক্ত নয়।
কারা মিছিল করেছে জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি জানি না। আপনারা স্থানীয় পত্রপত্রিকা দেখলে বুঝতে পারবেন। আমি ঠিক এতটা জানি না।
তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য কেউ তাঁকে জানিয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রিয়া বলেন, বাসার সামনে ব্যাপক পরিমাণে গতকালকে লোকজন ছিল। দারোয়ান তালা দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু তালা ভাঙার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। হুমকি দিয়ে গেছে, কালকে বাসা সিলগালা করে দেবে। অনেকভাবে কথাবার্তা বলেছে। আপনার দেশে আছেন, একটু চাইলেই সেটা খোঁজখবর নিতে পারবেন।
আপনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন কীভাবে, কারা পাঠিয়েছে? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পাঠিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আমাকে পাঠায়নি। তারা একটু চাইলেই সেটা খোঁজ করতে পারেন। আমাকে আইআরএফ থেকে সরাসরি ফোন করা হয়েছে, ই-মেইল পাঠানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ইনভাইট আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। তাদের ইনভাইটেশনে আমি আসছি।’
ঐক্য পরিষদের তালিকায় আপনার নামও ছিল কি না। রানা দাও (বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত) অস্বীকার করছেন?
উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘না কাজল দা, রানা দা জানেন না। ঐক্য পরিষদের কেউ ব্যাপারটা জানে না যে আমি এখানে এসেছি। এবং আমি যে আসব, সেটা আমিও যেদিন আসছি তার আগের দিন আমি জানতাম না। বলতে পারেন, হঠাৎ করেই আসছি। কীভাবে গেলেন প্রশ্নে জবাবে প্রিয়া বলেন- ‘আমি ই-মেইল পেয়েছি। আমাকে ইনভাইটেশন করা হয়েছে, তার মাধ্যমেই আমি এসেছি।’
ই-মেইল কবে পেয়েছেন দিদি প্রশ্ন করলে প্রিয়া বলেন, ‘ই-মেইলটা পেয়েছি ১৪ তারিখে, গত মাসের। কিন্তু আমি সেভাবে রেসপন্স করিনি। তারপর বারবার তারা ই-মেইল করেছে। এবং আমি এসেছি যেদিন, সেদিন আমি সন্ধ্যার পর এসেছি। ১৫ তারিখে আমি ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি।’
এটা কি আপনার প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া, নাকি আগেও গেছেন-এই প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি বহুবার যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্কলারশিপে আইবিএলতে প্রশিক্ষণে এসেছিলাম ২০১৪ সালে ওম্যান লিডারশিপ প্রোগ্রামে। আমি আমেরিকান সরকারের আইবিএলতে ইন্টারন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার যে লিডারশিপ প্রোগ্রাম, যে প্রোগ্রামে বাংলাদেশের স্পিকার, বঙ্গবন্ধুর প্রাণপ্রিয় নেতা, সবাই এসেছিলেন।
আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে এই কথাগুলো কেন বলেছেন? যেটা নিয়ে আপনি শোরগোল করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, আসলে এই কথাগুলো আমি কেন বলি, প্রথমে তো এই কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে নির্বাচন-উত্তর চরম নির্যাতন চলছিল ৯৪ দিন ধরে। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের প্রধানমন্ত্রী, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী তিনি সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর অনুসরণে আমি বলেছি। এবং যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যেকোনো জায়গায় বলা যায়। এটা আমি তাঁর কাছে শিখেছি। আমি তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে অনুসরণ করেছি। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো জায়গায় যে কথা বলা যায় এটা আমি তাঁর কাছ থেকে শিখেছি।
প্রিয়া আরো বলেন, ২০০১ সালে তখনকার যে সাম্প্রদায়িক সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে চরম নির্যাতন চালিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগের ওপরে। তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা পৃথিবীতে কীভাবে সংগ্রাম করেছেন। সেটা আপনারা সবাই অবগত আছেন। আসলে বিষয়গুলো আপনারা নিজেরাও জানেন। বাংলাদেশের যে পরিসংখ্যান বই রয়েছে, ২০০১ সালের পরিসংখ্যান বইয়ের যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর চ্যাপ্টার রয়েছে সেখানে এ বিষয়গুলো লেখা রয়েছে।
প্রিয়া সাহা বলেন, প্রতি বছর সরকার যে সেন্সাস রিপোর্ট বের করে, সেই সেন্সাস রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল ২৯.৭ ভাগ। আর এখনকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হলো ৯.০৭ ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়নের মতো। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা যদি একইহারে বৃদ্ধি পেত তাহলে অবশ্যই যে জনসংখ্যা আছে সেই জনসংখ্যা অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে যা হারিয়ে গেছে। সেই জনসংখ্যার সঙ্গে আমার তথ্যটা মিলে যায়।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত তিনি কিন্তু পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ সরকারের প্রকাশিত বইয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে উনি গবেষণা করেছেন। এবং সেই গবেষণায় উনি দেখিয়েছেন প্রতিদিন বাংলাদেশে থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে। এবং কী পরিমাণে ক্রমাগতভাবে লোক হ্রাস পেয়েছে। এবং পরিসংখ্যান বইয়ে আমি ২০১১ সালে স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছিলাম যার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত।
প্রিয়া বলেন, আপনি জানেন যে, আমরা বাংলাভাষায় কথা বলি। শব্দের প্রতিটা বিষয় যে আমরা অবগত তা নয়। আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি সেটি হলো এই পরিমাণে লোক থাকার কথা ছিল। যদি স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া, যেভাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সেই একইভাবে যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু ২৯.৭ শতাংশ থাকত। তাহলে এই জনসংখ্যাটা হতো। কিন্তু তা নাই। এই যে ক্রমাগতভাবে কমে গেছে, এটা যে নাই কেন সেটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি। এই কথাগুলো তো সাধারণ কথা। এটা একটা সত্য কথা, কীভাবে মানুষগুলো কোথায় গেছে, কী প্রতিদিন হচ্ছে না হচ্ছে। আপনি একজন সিনিয়র সাংবাদিক, দেশের সকল সাংবাদিক, সচেতন মানুষ; এ বিষয়গুলো আপনারা দারুণভাবে সচেতন। মানুষগুলো কোথায় গেল, কী হলো না হলো।
প্রশ্নকর্তার এক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইনি। আমি শুধু নিজের গ্রামের কথা বলি। আপনি যদি দেখেন, আমার বাড়ি পিরোজপুরে, সবাই জানেন। সেখানে ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৪০টি পরিবার ছিল; এখন মাত্র ১৩টা পরিবার আছে। তাই আমার গ্রামের মানুষগুলোকে আমি দেখেছি। এই মানুষগুলো কোথায় গেল, কোথায় আছে, সে তো আপনাদের দেখার কথা বা আমার রাষ্ট্রের দেখার কথা। সেটা যদি আপনি আমার কাছে জানতে চান, তাহলে কেমন হবে দাদা?
এ সময় তাঁর ব্ক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া বলেন, আপনারা সবাই জানেন। আপনি আমার গ্রামে গেলে দেখে আসবেন, প্রত্যেকের বাড়িঘর, কোন কোন বাড়িতে কে ছিল; প্রত্যেকের ভিটা পড়ে রয়েছে। কোন ঘরে কে থাকত। ওই গ্রামে যদি আপনি যান, প্রত্যেকের ঠিকানা, নাম, কার কী ছিল না ছিল, আপনি খুঁজে আসতে পারবেন। ৪০টি পরিবার ছিল এখন ১৩টা পরিবার আছে এবং ওইখানটায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, ২০০৪ সালে থেকে ক্রমাগতভাবে তারা চলে গেছে।
বাংলাদেশ থেকে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, আপনারা নিয়মিত এটার খবর প্রচার করে থাকেন। কোন গ্রাম উচ্ছেদ করা হচ্ছে, কার অত্যাচারে মানুষ চলে যাচ্ছে। গত মাসেও সাতক্ষীরা থেকে অনেক মানুষ চলে গেছে। সে সংক্রান্ত অনেক সংবাদ পত্রপত্রিকায় আসছে। ২০১১ সালে যখন অধ্যাপক জনাব আবুল বারাকাত এই গবেষণা করেন, তখন কিন্তু তিনি সিরডাপ মিলনায়তনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, প্রথিতযশা সাংবাদিকবৃন্দসহ ব্যাপক মানুষের সামনে এই রিপোর্টটি উনি প্রকাশ করেন। এবং তৎকালীন সকল গণমাধ্যম দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সকল রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তারপরে গণমাধ্যম নিয়মিতভাবে যখন যে মানুষ যেখান থেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে তারা রিপোর্ট পেলেই তা প্রকাশ করে। এবং যখন যেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে, আপনারা সে কাজটা দায়িত্বশীলতার সাথে করছেন।
বাংলাদেশ বিশাল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, আপনার এই বক্তব্য একটি ভুল চিত্র দাঁড় করায়, আপনার এই ব্ক্তব্যে কি এটা প্রমাণ করছে না, বাংলাদেশ সে পর্যায়ে নেই। প্রশ্নকর্তার এই প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া বলেন, বিষয়টি হলো, আমাদের দেশে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধটি হয়েছিল, তখন যে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল; চার লাখ মা-বোনদের সম্ভ্রম হারিয়েছিল, আমাদের যুদ্ধটা তো ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার, সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। তাঁর চার মূলনীতির মধ্যে অন্যতম ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, দেশ তো সেভাবেই এগুচ্ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই নীতি একপ্রকার পরিসমাপ্তি ঘটে। তার পরে দীর্ঘদিন সে অগণতান্ত্রিক বা সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা এ অসাম্প্রদায়িক দেশের চরিত্রকে কোন দিকে নিয়ে গেছে? ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে, সেটা আপনারা জানেন। এই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল, তা ক্রমাগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
প্রিয়া সাহা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বর্তমান সরকারের অন্যতম মূলনীতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। সেটা প্রতিষ্ঠার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরও প্রতিনিয়ত যে ঘটনাগুলো ঘটছে, মানুষের যে জীবন বা কেন দেশ ছাড়ছে, বা কেন হারিয়ে যাচ্ছে। একটা সেন্সাস থেকে আরেকটা সেন্সাসে আপনি দেখছেন, জনসংখ্যা নাই, কমে গেছে এবং কী হচ্ছে সেটা দেশের মানুষ সবই জানে।
প্রিয়া সাহা বলেন, রামুর কথা আপনাদের মনে আছে, আপনাদের মনে আছে অভয়নগরের কথা, ২০০১ সালের কথা, ৮৯-এর কথা, ৯২-এর কথা, সেই রংপুরের কথা, অথবা সাঁওতাল পাড়ার কথা বা নাসিরনগরের কথা। কী বলব আপনাকে? প্রতিটা নির্বাচনের আগে-পরে, যদিও নির্বাচনকালীন সহিংসতা বর্তমান সরকার বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই সহিংসতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সেটা আপনারা সবাই জানেন। আপনারা সংবাদমাধ্যমে যারা আছেন, তারা সবাই জানেন। এবং আপনারা জানেন আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নির্বাচনোত্তর সরকারকে নির্বাচনকালীন সহিংসতা কমিয়ে আনার কারণে ধন্যবাদ জানিয়েছে। অবশ্যই সেই সহিংসতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কমিয়ে আনার জন্য তার দল চেষ্টা করছে। সে ব্যাপারে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে হয়েছে। ভারত, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে তা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তার পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কেন অভিযোগ করেছেন জানতে চাইলে প্রিয়া বলেন, এটা দেশের সমস্যা। বিষয়টা আপনি জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিশেষত পুলিশবাহিনী পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক সফলতা দেখিয়েছে। এই যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা মৌলবাদের যে জিরো টলারেন্স ঘোষণা, আমি যেটা চেয়েছিলাম; বা যে জন্য বলেছি- আমেরিকাও এ যুদ্ধটা ঘোষণা করেছে; মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ। আমি এই কথাটা বলেছি, যাতে করে মার্কিন প্রশাসনও বাংলাদেশ সরকারের সাথে একসাথে কাজ করে।
‘আমাদের দেশে যাতে কোনোভাবে কোনো মৌলবাদের উত্থান না ঘটে, বাংলাদেশ মৌলবাদের কবলে না পড়ে, একসাথে যাতে কাজ করতে পারে সে জন্যই এই কথাটা আমি তাদের কাছে বলেছি।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য যে কথাগুলো বলছে, যখন নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি বুঝতে পারবে, তারা আমার কথাগুলো শুনবেন এবং দেখবেন তখন তারা প্রকৃত সত্য বুঝতে পারবেন। আমার বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নেওয়া নয়, বরং আমাকে সঙ্গে নিয়ে, আমাকে পাশে নিয়ে তারা এই মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।
প্রিয়া সাহা বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার বাড়িটা যেদিন পুড়িয়ে দেওয়া হলো, ২০০৪ সাল থেকে আমাদের বাড়ির প্রায় ৩০০ একর সম্পত্তি জামায়াতের নেতৃত্বে মুজিবর রহমান শামিম, প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান, সিরাজ মোল্লা, শওকাত মোল্লা, নজু সরদারসহ একটা সন্ত্রাসী গ্রুপ আমাদের গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তির প্রায় সকল ফসল নিয়ে যায়। প্রায় ৩০০ একর জমির ১০০টা মাছের ঘের থেকে মাছ নিয়ে যায় তারা। সেই ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত। আমার বাড়িটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মার্চ মাসের ২ তারিখে এবং এ বছরের ২২ এপ্রিল আমার গ্রামে আবারও আক্রমণ চালানো হয়।
কিন্তু আমার বাড়ি যেদিন পুড়িয়ে দেওয়া হয় সেদিন আমারই গ্রামের একটা ছেলে তার নাম দেলোয়ার সে আমার সমসাময়িক আমাকে ফোন করে হাউমাউ করে কেঁদে বলে প্রিয়া দি, তোমার বাড়িতে আগুন দিয়ে দিল আমরা কীভাবে থাকব?
প্রিয়া সাহা বলেন, আমাদের বাড়িতে যখন হামলা হয় তখন কিন্তু অনেক মুসলিম আহত হয়েছিল। আপনি যে কথাটা বলেছেন সেটা অবশ্যই সত্য। মুসলিম সম্প্রদায় কিন্তু অবশ্যই অন্য কোনো সম্প্রদায়ের শত্রু না। ৯৯ শতাংশ মানুষ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে এবং একসঙ্গে থাকে। কিন্তু কিছু দুষ্ট লোক আছে যারা এ ঘটনাগুলো ঘটায়।
সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া বলেন, এটা সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক ঘটনা। আমাদের জমিটা দখল নেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। আমি আর একটা কথা বলিনি আপনাকে সেটি হলো- আমার বড়ভাই কিন্তু প্রখ্যাত একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে নেভাল কমান্ড অফিসার। তিনি একজন সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে অবসরে আছেন।
তারা সর্বশেষ আমাদের বাড়িটা পুড়িয়ে, আমাদের বাড়িতে আঘাত করে তারা সম্পূর্ণ সম্পত্তিটা দখল নিতে চেয়েছে। ওই সংখ্যালঘু গ্রামটাকে তারা উচ্ছেদ করতে চেয়েছে।
কারা উচ্ছেদ করতে চাইছে-জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, এরা দুষ্ট লোক। এরা সব সময় সরকারি দল। যখন যে সরকার আসে তখন সে দলে থাকে। প্রথমে যখন তারা আমার বাড়িতে আগুন দেয় তখন সে সময় আমাদের এমপি ছিলেন দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন সময় সত্য-মিথ্যা নাম ব্যবহার করে। তাদের সুবিধামতো তারা বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে।
প্রিয়া সাহা বলেন, আমাদের যে সম্পত্তি, আমরা এ বছরও খাজনা দিয়েছি। আমাদের পূর্ব পুরুষের রেকর্ডিও সম্পত্তিতে খাজনা দেই আমরা। কিন্তু আমাদের সম্পত্তিতে আমরা, আমাদের গ্রামের লোকজন, আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা যার নিজের জমিতে সে লেবার। মানে তার জমিতে সে ফসল ফলায় ধানটা আরেকজন নিয়ে যায়। মাছটা আরেকজনে নিয়ে যায়। আমাদের ওখানে একটা ইটের ভাটা করে সমস্ত, ওই যে বললাম- প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান শামীম সমস্ত মানে বেশির ভাগ জমিন টপ সয়েলটা কেটে নিয়ে গেছে ডেইলি স্টার থেকে শুরু করে যুগান্তর, জনকণ্ঠ সবাই বিশাল বিশাল নিউজ করেছে। আমাদের জমির যে টপ সয়েল কেটে নিচ্ছে, যে ইটের ভাটা করেছে। আমাদের সর্বস্ব শেষ করে ফেলেছে।
‘অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল, প্রিন্টিং মিডিয়া প্রায় ৫০টা পত্রিকায় নিউজ করেছে যখন আমার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ক্রমাগতভাবে আমাদের যে জমির ফসল নিয়ে যায়, সেগুলো সকল পত্রপত্রিকা দায়িত্বশীলতার সাথে সবাই নিউজ করে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই, সেই মানুষগুলো তার অধিকার নিয়ে তার সম্পত্তিতে সে খেতে পারছে না।’
রাগে-ক্ষোভে নাকি কোনো প্রাপ্তির আশায় অভিযোগ করেছেন? অনেকে বলছে আপনি নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায় নালিশ করেছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার অবস্থার জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, আসলে আপনি বলেন, গ্রিনকার্ড পাওয়ার জন্য কি রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হয়। আমি আপনাকে বলেছি, আমি বহুবার আমেরিকায় এসেছি। আমি কেন দেশ ছাড়ব? আপনি আমার বক্তব্যে দেখেছেন, আমি বলেছি, আমি দেশে থাকতে চাই। ওটাই আমার প্রথম কথা, ওটাই আমার শেষ কথা।
আপনি কি তাহলে দেশে ফিরবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, অবশ্যই। কেন ফিরব না?
পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য এবং এই যে অবহেলিত, নিপীড়িত মানুষের সাথে থেকে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এবং একটা অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমি আমৃত্যু কাজ করে যাব। সেটাই আমার স্বপ্ন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আপনার এই ভিডিও, এটা ভাইরাল হলো কীভাবে, এটা বাইরে আসল কীভাবে? এটা কি ওপেন স্পেসে হয়েছে নাকি মিডিয়ার এটা প্রচার হয়েছে? এটা কীভাবে আসল-প্রশ্ন করা হলে প্রিয়া সাহা বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমাদের দেখা হয়েছিল ওভাল অফিসে। আপনারা জানেন, এখানে কঠোর বিষয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ওভাল অফিসে যে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, আমি ওনার সঙ্গে দেখা হওয়ার ঠিক ৪০ মিনিট আগেও জানতাম না যে তার সাথে আমার কখনো দেখা হবে বা সেখানে যাব। আমার একটা মিটিংয়ে এখানে একটা প্রেজেন্টেশন ছিল। যেই প্রেজেন্টেশনের জায়গায় সরকারের সাথে করে যে টিমটা এসেছিল নির্মল চ্যাটার্জি, নির্মল রোজারিও, অশোক বড়ুয়া এবং এলিনা খান তারা ওই রুমে উপস্থিত ছিলেন। এবং আমি যেখানে কথাগুলো বলছিলাম, তারা আমার বক্তব্যটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমাকে একজন ডাক দিল যে এইদিকে আসেন। তখনো প্রোগ্রামটা চলমান ছিল। আপনি তাদের কাছে শুনে নিতে পারেন।
প্রিয়া আরো বলেন, আমাকে ডেকে নিয়ে এসে বলল যে চলেন আমরা হোয়াইট হাউসে যাব। তো আমি আর বুঝি নাই। হোয়াইট হাউসে যাবে, ঠিক আছে যাব। আমি জানতাম না যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হবে। তো সবাই গাড়িতে করে চলে গেল, স্যাম ব্রাউন দ্যাট অ্যাম্বাসেডর অ্যাপলায়েড তাঁর নেতৃত্বে তো আমরা গেলাম। কিছুক্ষণ বসার পরে শুনতে পারলাম, খুব সুনশান, খুব গোছগাছ চলতেছে যে বিষয়টা কি আমরা একটা রুমে বসলাম যে পাশের রুমেই প্রেসিডেন্ট আসবে, তার সাথে আমাদের দেখা হবে কয়েক মিনিটের মধ্যে। তখন ওইখানে কিছু প্রটোকল আছে সব ব্যাগট্যাগ সবকিছু দেখেটেকে যেতে হয় কীভাবে ব্যাচট্যাচ পরতে হয়, সেগুলো পরে সবাইকে সিরিয়ালি বিভিন্ন ধরনের নাম্বারিং করা হয়, নিয়ে আমাদেরকে দাঁড় করাল। তারপর প্রেসিডেন্ট আসলো। যখন অন্যরা কথা বলছেন, দেখলাম যে অনেকেই কথা বলছে। আমার ধারণা ছিল না, আমার মনে হয়েছিল যে উনি একটা বক্তব্য দিবেন, এই প্রোগ্রামটা আমেরিকাতে হচ্ছে। আমরা হয়তো পেছনে দাঁড়িয়ে থাকব। একটু পরে দেখলাম দু-একজন কথা বলছে, বেশ কয়েকজন কথা বলছে। তখন আমার মনে হলো যে, আমি যদি একটু প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলতে পারি। এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে মৌলবাদের যুদ্ধ সেই যুদ্ধটাকে শক্তিশালী করার জন্য যদি আমি একটু কথা বলতে পারি। তো, সেজন্য আমি কথা বলেছি। আমি কোনো মতেই জানতাম না যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার কথা হবে।
কিন্তু ভিডিওটি বাইরে এলো কীভাবে-সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ওখানে মিডিয়া উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভিডিওটি কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে, না হয়েছে তা আমি বলতে পারব না। সেই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে কতদিন যুক্ত আছেন জানতে চাইলে সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা বলেন, সে বহুদিন। ১৯৯০ সাল থেকেই। এখন সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছি।
আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে সম্মান দেখিয়ে কথা বলছেন। তাঁর ভক্ত বলেই নিজেকে দাবি করছেন। আপনি সরাসরি রাজনীতি না করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতো একটি সাম্প্রদায়িকভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে কেন কাজ করছেন?
এই প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কোনো সাম্প্রদায়িক সংগঠন নয়। যেকোনো সাম্প্রদায়িক সংগঠনের একটি নিজস্ব এজেন্ডা থাকে। তার সম্প্রদায়ের জন্য অনেক কিছু করে। কী কী কাজ করে আপনি জানেন। হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ একটা কাজই করছে। সেটা কী? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য কাজ করছে। যেটা বর্তমান সরকারও করছে। এবং তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন কেমন করে সাম্প্রদায়িক সংগঠন হলো আমি বুঝতে পারছি না দাদা।
কিন্তু ঐক্য পরিষদে তো হিন্দু-মুসলিম সবাই নেই। শুধু মাত্র কয়েকটি সংগঠন-এই কথার জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, আপনি জানেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। এবং ৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার পরেই শুধু এই তিন সম্প্রদায়ের লোক না, বাংলাদেশের অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ও কিন্তু এদের সাথে থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য সংগঠনটি তৈরি হয়। যেহেতু রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে, সে কারণেই হয়তো সদস্য হিসেবে ইসলাম এই সংগঠনে নেই। কিন্তু আপনি জানেন, দেশের সকল প্রতিথযশা অসম্প্রদায়িক লোক আমাদের উপদেষ্টা রয়েছে। এবং আমাদের সকল মিছিল-মিটিংয়ে সবার কাছে সব সময়ই বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক শক্তি এবং সিভিল সোসাইটি আমাদের সাথে রয়েছে। এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে, সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সব সময় আমাদের সব প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকে সহমর্মিতা ঘোষণা করেন।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা পরিসংখ্যান থেকে সত্যটা জানবেন। দেশের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার ইচ্ছে আমার কখনো ছিল না, কখনোই নাই, কোনো দিনই হবে না। দেশটা আমার। আমার পরিবার যুদ্ধ করেছে দেশটা স্বাধীন করার জন্য। এই ভূমির জন্ম থেকে আমার পূর্ব পুরুষরা এখানে বাস করে। এই দেশের কোনো রকম অমঙ্গল হোক, অকল্যাণ হোক সেটা আমি কোনো অবস্থাতেই সেটা আমি করতে পারি না, করব না। অতএব যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকে তার অবসান হবে নিশ্চয় এই সাক্ষাৎকারে। ধন্যবাদ আপনাকে।’
এরপর ওই সাংবাদিকও প্রিয়া সাহাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাক্ষাৎকার শেষ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে তাঁর কার্যালয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে এক নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে (বাংলাদেশে) প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ডিসঅ্যাপেয়ার (নিখোঁজ) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে (বাংলাদেশে) ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের (বাংলাদেশে) থাকতে সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’
এ সময় ট্রাম্প জানতে চান, ‘কারা জমি দখল করেছে? কারা বাড়ি দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় পলিটিক্যাল শেল্টার (রাজনৈতিক ছত্রছায়া) পায়।’