সিরাজগঞ্জে বাঁধে ফাটলের খবরে আতঙ্কিত শহরবাসী

Looks like you've blocked notifications!

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ছয় সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ শনিবার সকাল ৬টায় সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ১৪.২৯ মিটার (বিপৎসীমার ১৩.৩৫)।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এ মুহূর্তে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।

তবে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যমুনা তীরবর্তী কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ২০০ গ্রাম বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব গ্রামের পরিবারের সদস্যরা অনেকে বাঁধ, রাস্তা ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

অনেককে খোলা আকাশের নিচে রান্না করতে দেখা গেছে। বাড়ির মালামাল, শিশু আর গবাদি পশু নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বন্যাকবলিত মানুষ। শাহজাদপুর, বেলকুচি ও এনায়েতপুরে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে অনেক তাঁত কারখানা।

এতে বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিকরা। অপর দিকে শাহজাদপুরে রাওতারা রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে গো-চারণভূমি। গরুর খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে খামারিরা। বেশি দুর্ভোগে রয়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। এসব এলাকার ফসলি জমি ও হাট-বাজার ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যার্তদের বিতরণের জন্য ৪৯৪ টন চাল ও আট লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। এর মধ্যেই কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুল হক বলেন, বন্যার পানিতে জেলার প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির পাট, রোপা আমন, আউশ ও সবজির ক্ষেতে পানি উঠেছে।

কাজিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিপুর-ধুনট আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যার্তরা বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় সেগুলো বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যা পরবর্তীতে সেগুলো মেরামত করা হবে।’

এদিকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ফাটল দেখা দেওয়ার খবরে শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে মনে করছে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে শহর ও শহরতলীর গ্রামগুলোতে বন্যার পানি ঢুকতে পারে। তবে ধস ঠেকাতে শহর রক্ষা বাঁধে ব্লক ফেলা হচ্ছে।

এ ছাড়া নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভাঙনের শঙ্কাও রয়েছে। তবে এসব আশংকা উড়িয়ে দিয়ে শহরবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধটি কেপিআইভুক্ত এলাকা। এ বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার প্রবল স্রোতের কারণে বাঁধের লাঞ্চিং অ্যাপ্রোনে গিয়ে আঘাত করে। এতে দুটি ব্লকের মাঝখানে একটি গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে সিসি ব্লক ডাম্পিং করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।’

শুক্রবার দুপুরের দিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন) মোতাহার হোসেন, ঘাটাইল সেনানিবাসের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মেদ ঘটনাস্থল শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।