প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করব : ব্যারিস্টার সুমন

Looks like you've blocked notifications!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করার অভিযোগে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়্যেদুল হক সুমন ।

গতকাল শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক লাইভ ভিডিও বার্তায় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আগামীকাল রোববার আদালতে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন তিনি।

ব্যারিস্টার সুমন ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আজকে আমি আমার বাড়ি সিলেটে অবস্থান করছি। একটু আগে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে যে বিষয়টি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যে বক্তব্য প্রিয়া সাহা  দিয়েছেন, এটি পুরোপুরি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। উনি বলেছেন, প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ মাইনরিটি মানুষকে বাংলাদেশ থেকে আমরা নাকি গুম (ডিসঅ্যাপেয়ার) করে দিয়েছি এবং বাকি যারা আছেন, তাঁরাও নাকি গুম হওয়ার পথে। স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর, উনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একজন সিটিজেন হয়ে আমেরিকার মতো জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের এ রকম ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা আমি মনে করি, শুধু ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না, এটা রাষ্ট্রদ্রোহের এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ জন্য আমি ব্যারিস্টার হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রোববার কোর্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে উনার (প্রিয়া সাহা) বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করব।’

ব্যারিস্টার সুমন আরো বলেন, ‘উনি দুদকের একজন কর্মকর্তার স্ত্রী হয়ে কীভাবে বললেন যে, উনার সব জায়গা-জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? আমি মনে করি, এটা চক্রান্ত এবং পুরো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং এ রকম ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। আমার ফেসবুক ফলোয়ার যারা আছেন, তাদের আমি বলব যে, আপনারাও এটাতে শরিক হন। রোববার আপনারা খেয়াল রাখুন, আমরা সবকিছু রেডি করছি, আগামী রোববারই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হবে।’

ব্যারিস্টার সুমন আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এ রকম একটা মিথ্যা অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেওয়া, যেখানে বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যেখানে আমাদের কোনো মাইনরিটির কারো কোনো বিপদ হলে আমরা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ি। মুসলমানদের নামাজে যেখানে হিন্দু ভাইরা পাহারা দেন, আমরা যেখানে মুসলমানরা হিন্দুদের পরিবারে দাওয়াত খাই, হিন্দুদের আমরা প্রোটেকশন দেই। মাইনরিটিদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক স্বয়ং ইন্ডিয়াতেও নাই। আমরা যে জিনিসটা করছি, তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আমি নিশ্চিতভাবে মনে করি, এটার বিরুদ্ধে অনেক বড় ষড়যন্ত্র আছে এবং তাঁকে বাংলাদেশে এনে আমি মনে করি, বিচারের মুখোমুখি করা এখন আমাদের জন্য একমাত্র ফরজ হয়ে গেছে। এজন্য আগামী রোববার আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করব। বাংলাদেশকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করবেন, ৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যারাই ষড়যন্ত্র করবেন, আমি মনে করি, তারাই বিচারের মুখোমুখি হবেন। এটাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ এবং তরুণদের যেন চাওয়া এবং পাওয়া হয়।’

এদিকে প্রিয়া সাহা প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বৌদ্ধ মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একে অপরকে শ্রদ্ধা করে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘আমার প্রথম আট মাসের দায়িত্ব পালনকালে আমি বাংলাদেশের আটটি বিভাগেই ঘুরেছি। মসজিদ, মন্দির ও চার্চে গিয়ে ইমাম পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আমি এসেছি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে, আমার কাছে যেমনটা মনে হয়েছে, এখানকার ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসের লোকজন একে অপরকে শ্রদ্ধা করে।

‘ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। যদিও কোনো দেশই সংখ্যালঘুদের অধিকার দিতে সফলতা পায়নি। এ অঞ্চলের প্রধান ইস্যুগুলো কী তা যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানে’, যোগ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

এদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে করা প্রিয়া সাহার অভিযোগ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেওয়া প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন কাউকে করতে দেখিনি। তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে।’

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এসব কথা লেখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় একাধিকবার ভরা হাউসে পৃথিবীর সব দেশের এবং বাংলাদেশ ও বাইরের দেশের এনজিওদের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। যেখানে শ্রদ্ধেয় রানা দাশ গুপ্তর মতো মানুষরাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেওয়া প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন কাউকে করতে দেখিনি। তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পও জানেন যে তার কাছেও মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। মার্কিন প্রশাসন তাদের এখানকার দূতাবাসের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত তথ্য পেয়ে থাকে এবং আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকি। প্রিয়া সাহার সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমালোচনা করছেন। এটাও ঠিক নয়। যেমনটি নয় প্রিয়া সাহার করা অভিযোগ। সমাজের সব স্তরে যার বিচরণ এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যার যোগাযোগ তার একইরকম আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে বা না বুঝে এটার ক্ষতি করে ফেলেন। সবার উচিত এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিঞ্ঝুতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে এক নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে (বাংলাদেশে) প্রায় ৩৭ মিলিয়ন (৩ কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ডিসঅ্যাপেয়ার (নিখোঁজ) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনো সেখানে (বাংলাদেশে) ১৮ মিলিয়ন (এক কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের (বাংলাদেশে) থাকতে সাহায্য করুন। আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’

এ সময় ট্রাম্প জানতে চান, ‘কারা জমি দখল করেছে? কারা বাড়ি দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় পলিটিক্যাল শেল্টার (রাজনৈতিক ছত্রছায়া) পায়।’

হোয়াইট হাউজের ওয়েব সাইটের বিবৃতিতে বাংলাদেশি ওই নারীকে মিসেস সাহা পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা যায় ওই নারীর নাম প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক।