বেড়েছে যমুনা নদীর পানি, দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১৮১টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব গ্রামের ২১ হাজার ৩৬২টি পরিবার আংশিক ও এক লাখ ১৬ হাজার ৮১০ জন মানুষ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এক হাজার ৮৬টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ২১ হাজার ৫২৬টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ উঁচু বাঁধ, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে।
জেলার চৌহালী উপজেলায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং সদর উপজেলায় ২১টি, কাজীপুরে একটি, চৌহালীতে ছয়টিসহ মোট ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ও ২০৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ। ৩৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১১ হাজার ৬০৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। কাজীপুরে ১২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ১৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীতে বিলীন হয়েছে আরো পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে যমুনার শাখা নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুল হক জানান, সদরে এক হাজার ১০০ হেক্টর, কাজীপুরে দুই হাজার ৩৭০, বেলকুচিতে এক হাজার ৪৮, চৌহালীতে ২৮০, শাহজাদপুরে ৪৫১, রায়গঞ্জে ৬৯, কামারখন্দে ৮ ও উল্লাপাড়ায় এক হাজার ৮১ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমন, আউশ ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৩৫৩.৩ টন চাল, পাঁচ লাখ টাকা ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মজুদ রয়েছে ৩৪৬.৭ টন চাল ও তিন লাখ টাকা। আরো পাঁচ লাখ টাকা, ৫০০ টন চাল ও চার হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।