মিন্নির রিমান্ড বাতিলে সাড়া দেননি হাইকোর্ট
বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির রিমান্ড বাতিলের জন্য করা একটি আবেদনে সাড়া দেননি হাইকোর্ট।
তবে আবেদনকারীর প্রতি হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আপনারা লিখিতভাবে আবেদন অথবা মামলাটি হাইকোর্টে বিচারের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ মুহূর্তে তদন্তাধীন বিষয়ে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না।’
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত ‘মিন্নির রিমান্ড, পাশে কেউ নেই’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক হোসেন। তখন আদালত এই আদেশ দেন।
শুনানিকালে আইনজীবী ফারুক হোসেন হাইকোর্টকে বলেন, ‘এ মামলার প্রধান সাক্ষী ছিল আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে চারজনকে এখনো গ্রেপ্তারে প্রশাসন বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীশোকে এই মুহূর্তে বিপর্যস্ত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে টর্চারিং করে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর আবার রিমান্ডে নেওয়া হয়। এটা অমানবিক।’
‘এ ঘটনার মূল হোতাদের আড়াল করতে মামলার প্রধান সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ সাক্ষী মিন্নি তো সব সময় মামলার পাশে থাকবেন; তাঁকে পরেও গ্রেপ্তার করা যেত। আমরা আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির রিমান্ড বাতিল ও মামলা সঠিক পথে পরিচালনার নির্দেশনা চাই।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। তবে আপনারা চাইলে মামলাটি বিচারের জন্য এবং রিমান্ড বাতিলের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করতে পারেন,’ যোগ করেন আইনজীবী।
আইনজীবী ফারুক হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি প্রধান সাক্ষী। আসামিদের গ্রেপ্তার না করে মিন্নিকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড নেওয়ায় মামলার ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করবে। আদালত বলেছেন, লিখিতভাবে আবেদন করতে বা অন্য কোনো বেঞ্চে আবেদন করার জন্য। আমরা লিখিতভাবে করতে গেলে সময়ক্ষেপণ হবে, ততক্ষণে রিমান্ড শেষ হয়ে যাবে।’
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি।
খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন।
সবশেষ এই মামলার তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজীকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিশানের ভাই রিফাত ফরাজী এ মামলার দুই নম্বর আসামি। গত ২ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে পর পর দুবার রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তাঁর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই পুলিশ হামলার সময় ব্যবহৃত একটি রামদা বরগুনা কলেজের পাশের একটি খাল থেকে উদ্ধার করে।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। মামলার এক নম্বর সাক্ষী রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকেও জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, মিন্নি এই হত্যায় জড়িত ছিলেন। যদিও মিন্নি দাবি করেছেন, তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন।
জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ২৬ জুন সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আটজন এবং তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত সাতজনসহ মোট ১৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এজাহারভুক্ত গ্রেপ্তারকৃত চারজন এবং তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত ছয়জনসহ মোট ১০ আসামিকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত এজাহারভুক্ত দুজন এবং তদন্তে প্রাপ্ত সন্দিগ্ধ আসামি একজনসহ মোট তিন আসামিকে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ এ মামলায় এজাহারে বর্ণিত আসামিসহ সব পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।