মান্দায় বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত, অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ বুধবার সকালে আত্রাই নদীর ডান তীরে উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু নামকস্থানে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ক্ষেতের ফসল। বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে পূর্বমান্দার সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত কয়েকদিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আত্রাই ও ফকির্ণী নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আত্রাই নদীর ডান তীরে সুজনসখী খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় বাঁধের ভেতর দিয়ে পানি পার হতে থাকে। এ সময় স্থানীয় প্রশাসন এলাকাবাসীর সহায়তায় বাঁধটি মেরামত করে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, নদীর এ অবস্থায় স্থানীয়রা রাতে পাহারা বসিয়ে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বুধবার সকালে জোতবাজার-আত্রাই রাস্তার চকবালু নামকস্থানে ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি পার হতে থাকে। কিন্তু পানির প্রবল চাপের কারণে বাঁধটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
এরই মধ্যে পানির তোড়ে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর, দাসপাড়া, চকরামপুর, শহরবাড়ি, কর্ণভাগ, পারসিমলা, নহলা কালুপাড়া, আবিদ্যপাড়া, যশোপাড়া, পশ্চিম দুর্গাপুর, শিবপুর, খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া ও চককামদেব, নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ, চকহরি নারায়ণ ও বাকসাবাড়ি, কশব ইউনিয়নের বনকুড়া ও দক্ষিণ চকবালু এবং কালিকাপুর ইউনিয়নের বেড়েরটেক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদীর পানি বৃদ্ধিতে চকবালু নামকস্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অন্যস্থানগুলো টিকিয়ে রাখতে দিনরাত কাজ করেছে স্থানীয়রা। কিন্তু ভেঙে যাওয়া স্থানটি স্থানীয়দের নজরদারিতে ছিল না।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, এরই মধ্যে দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে, এ মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, মান্দা উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১০ কেজি চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিড়া, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ নিত্যপ্রয়োজীয় সামগ্রী সংবলিত ৩০০ প্যাকেট বিতরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে। মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান সরেজমিনে তদন্ত করে বন্যাকবলিত মানুষদের মধ্যে বুধবার বিকেলে এই ত্রাণ সামগ্রীগুলো বিতরণ করেছেন।