রাসেলকে টাকা দেয়নি গ্রিনলাইন, নাম প্রত্যাহার আইনজীবীর

Looks like you've blocked notifications!

নিজেদের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ পালন করেনি গ্রিনলাইন পরিবহন। এ কারণে গ্রিনলাইনের পক্ষের আইনজীবী অজি উল্লাহ নিজেকে ওই মামলা থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আজ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রাসেলের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শুনানির জন্য গেলে আইনজীবী অজি উল্লাহ এই মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। 

এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২১ জুলাই দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাসেলের পক্ষের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে রাসেলকে দিতে হাইকোর্টের আদেশ পালন করেনি গ্রিনলাইন। তারা সর্বশেষ আদেশের পর আর কোনো টাকা দেয়নি। কোনো যোগাযোগ করেনি রাসেলের সঙ্গে।’

এই আইনজীবী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গ্রিনলাইন হাইকোর্টের আদেশ পালন করেনি। এটা চরম ঔদ্ধত্য! তাদের যদি সমস্যা থাকত, তাহলে তারা সেটা আদালতকে বলতে পারত। কিন্তু তারা কিছুই বলেনি, আবার টাকাও দেয়নি।’

আজ আদালতে রাসেলকে নিয়ে করা রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর এ সময় রাসেল সরকার তাঁর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৫ জুন হাইকোর্ট রাসেল সরকারকে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে গ্রিনলাইনের প্রতি নির্দেশ দেন। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে রাসেলকে টাকা দিয়ে ১৫ তারিখের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। এবং এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৬ জুলাই দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারের হাতে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রিনলাইন বাস কর্তৃপক্ষ। ওই দিন হাইকোর্ট কক্ষে বিচারকের সামনে গ্রিনলাইনের আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ এই চেক রাসেলের হাতে তুলে দেন।

ওই সময় গ্রিনলাইনের আইনজীবী বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে এক মাস সময় চাইলে হাইকোর্ট সময় মঞ্জুর করেন। সেইসঙ্গে রাসেলকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে গ্রিনলাইন বাসের মালিককে নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশ অনুযায়ী রাসেলের চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে আদালতকে জানায় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ।

এরপর গত ১৫ মে হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে রাসেলকে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে রাসেলের চিকিৎসার জন্য যা খরচ তা দিতে বলা হয়।

২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় এক যুবকের বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসটি ও তার চালককে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেটকার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তাঁর গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাসচালক তাঁর ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।