এরশাদের জন্য পল্লী নিবাসে খোঁড়া হলো কবর
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাশ দাফন রংপুরে পল্লী নিবাসের বাড়িতে করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি রংপুর শাখা। কোনোভাবেই তাঁকে রাজধানীতে দাফন করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন এখানকার নেতাকর্মীরা।
এদিকে এরশাদের দাফনের জন্য তাঁর পল্লী নিবাসের বাড়ির বাগানে কবর খুঁড়েছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। আজ সোমবার বিকেলে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেন।
নগরীর দর্শনা মোড়ে অবস্থিত এরশাদের বাড়ি পল্লী নিবাসে নেতাকর্মীদের নিয়ে বিকেলে কবর খোঁড়া শুরু করেন সিটি মেয়র। এ সময় মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা জানান, কাল জানাজা শেষে এখানেই সমাহিত করা হবে তাঁদের নেতা এরশাদকে।
গতকাল রোববার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। ওইদিনই দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সাবেক সেনাশাসককে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ ব্যাপারে আজ রাতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ তাদের আবেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রিয় নেতাকে (এইচ এম এরশাদ) তাদের কাছে রাখতে চাচ্ছেন। তাদের এই দাবির প্রতি আমি শতভাগ শ্রদ্ধা জানাই। কালকে আমরা চেয়ারম্যান সাহেবের লাশ নিয়ে রংপুর যাচ্ছি। সেখানে জানাজা হবে। নেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা হবে, আলোচনা হবে। আমরাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব, জাতীয় নেতাকে জাতীয় পর্যায়ে সম্মান করার জন্য। তা ছাড়া এরশাদ সাহেব জীবিত থাকাবস্থায় কোথায় দাফন হবে বিষয়টি তাঁর ছোট ভাই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তাঁর সহধর্মিনী রওশন এরশাদকে বলে গেছেন।’
এদিকে এরশাদকে ঢাকায় সামরিক কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার সকালে জাতীয় পার্টির রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলার নেতারা রংপুরে যৌথ বৈঠক করে। এত সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সভাপতি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। বৈঠকে বক্তব্য দেন মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলীসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা। বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
মোস্তাফিজার রহমান জানান, যেকোনো মূল্যে তাঁরা এরশাদকে রংপুরে দাফন করবেন। তিনি বলেন, জানাজার জন্য মঙ্গলবার এরশাদের মরদেহ ঢাকা থেকে রংপুর আনা হবে। ‘যদি জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ রংপুর থেকে ঢাকায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয় তাহলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করবে।’
সিটি মেয়র বলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদ তাঁকে পল্লী নিবাসে দাফনের কথা জানিয়েছিলেন। সুতরাং আমরা তাঁকে রংপুরের বাইরে কোথাও দাফন করতে দেব না।
মোস্তাফিজার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ থেকে এরশাদকে বিচ্ছিন্নসহ দলকে নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা উত্তর এলাকার মানুষ কাউকেই এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’
পরে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পল্লী নিবাসের লিচু বাগানে কবর খোঁড়া শুরু করেন মোস্তাফিজার রহমান।
গতকাল রোববার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এরশাদ। রোববার তাঁর প্রথম জানাজা ঢাকার সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হয়। সোমবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার টানেল ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা হয়। এরপর তাঁর মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। কাল মঙ্গলবার সকালে এরশাদের মরদেহ নেওয়া হবে রংপুর। সেখানে চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।