এডিস মশা নির্মূলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ
রাজধানীতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ ছড়ানো বন্ধে এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়া বন্ধে এবং এডিস মশা রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এ ছাড়া এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ (দায়ী) ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র, দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যসচিব, এলজিআরডি সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আজ রোববার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জায়েদী হাসান খান ও সায়েরা ফাইরুজ।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও এডিস মশা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর আদালত রাজধানীতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ ছড়ানো বন্ধে এডিস মশা নির্মূল ও ধ্বংসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এছাড়া ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোদে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপের বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে।’
জানা যায়, ঢাকায় গত এক সপ্তাহে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ২৮ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে বলে জানিয়েছে কন্ট্রোল রুম। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগর কর্তৃপক্ষের আরো কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নগরবাসী।
সরকারি হিসাব মতে, চলতি মাসে রাজধানীতে এ পর্যন্ত মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজারের মতো মানুষ। আর গত মে মাসে আক্রান্ত হন ১৯৩ জন, জুনে এক হাজার ৬৫৩। অর্থাৎ নগরীতে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যদিও বেসরকারি হিসাব মতে, এই পরিসংখ্যান আরো বেশি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘আমাদের এ অবস্থার জন্য কে দায়ী? মেয়রই তো দায়ী, এগুলো কি দেখা উচিত না? এগুলো যে ছেটানো হয়, এগুলো কোন ওষুধ? এগুলোতে তো কোনো কাজই হয় না।’
এদিকে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো, প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের ধরন। অনেকেরই সাধারণ জ্বর ভালো হওয়ার পরবর্তী সময় ধরা পড়ছে ডেঙ্গু।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপর এক রোগী বলছিলেন, ‘আমার জ্বর ছিল না, কিন্তু শরীরে দুর্বলতা ছিল। খেতে পারতাম না, এজন্যই ডাক্তার দেখানো, তারপর দেখা গেল ডেঙ্গু জ্বর। প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। এটা ধরা পড়ার পর আমি হাসপাতালে ভর্তি হই।’
ঢাকা মেডিকেলের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলছিলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। ঢাকার যেসব জায়গায় ডেঙ্গু বেশি হয়, রামপুরা, মগবাজার ও বনশ্রী—এসব এলাকা থেকে বেশি আসছে।’
এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে নাগরিক সমাজ। আজ শুক্রবার সকালে শাহবাগে মানববন্ধন থেকে সিটি মেয়রদের মশা নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
বক্তারা আক্ষেপ করে বলেন, ঢাকা সিটির কর্তাব্যক্তিরা দায়-দায়িত্ব না নিয়ে বালখিল্যসুলভ কথাবার্তা বলছেন। এজন্য আরো বেশি করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কায় এ বছর এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। সেই সঙ্গে এই রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। মহামারী আকার ধারণ করেছে থাইল্যান্ডেও।