ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসে হুমকির মুখে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের করুণ দশা হয়েছে। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, গেল পাঁচ দিনে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের অনেকেই আশ্রয়হীন। এ ছাড়া ভূমিধস হয়েছে অন্তত ৪০০ স্থানে। ১০টি পাহাড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল।
প্রশাসন বলছে, দুর্যোগে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় নেওয়া হয়েছে সব ধরনের পদক্ষেপ। বর্ষার শুরুতেই টানা বর্ষণ, তার সঙ্গে ভূমিধস। ফলে আতঙ্ক বেড়েছে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আঘাত হেনেছে অন্তত ১২টি ক্যাম্পে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বালুখালি, কুতুপালং, মধুছড়া, জামতলি।
আইওএমের তথ্য অনুযায়ী, ভারি বর্ষণে পাঁচ দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোহিঙ্গাদের সাড়ে তিন হাজার ঘর। ভূমিধস হয়েছে অন্তত ৪০০ স্থানে। সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয়হীন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি বেশি নাজুক। কারণ, এবার বৃষ্টিপাত ও ভূমিধস হয়েছে বেশি। অন্তত ১০টি পাহাড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল। তবে প্রশাসনের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন শতাধিক বসত ঘর। তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যত্র সরিয়ে পুনর্বাসনের কথা জানান কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া, বর্ষায় দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে প্রশাসন। কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে এখন বাস করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় এনজিও সংস্থার পাশাপাশি প্রশাসনের লোকজন প্রস্তুত রয়েছেন।
আইওএম-বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে ক্যাম্পে দুর্দশা বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জরুরি সাহায্য দেওয়া ও তাদের পুনরায় আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমাদের সবগুলো টিম দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। যদিও আমরা দুর্যোগের তাৎক্ষণিক ক্ষতি কাটানোর জন্য কাজ করছি, কিন্তু আমাদের অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে।’
ম্যানুয়েল পেরেইরা আরো বলেন, ‘আইওএম গত দুইদিনে (৯ এবং ১০ জুলাই) প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে জরুরি সাহায্য দিয়েছে এবং ২০১৮ সালের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭০ জনকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে, এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি এ অঞ্চলের মানুষকে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং আমরা সবে মাত্র এই মৌসুমের অর্ধেক সময় পার করছি।’
গত ৪৮ ঘণ্টায় আইওএমের ক্যাম্পে থাকা টিমগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রায় পাঁচ হাজার ৭৯টি প্লাস্টিক ত্রিপল বিতরণ করেছে।
কুতুপালং মেগাক্যাম্প এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আইওএম এবং এর পার্টনার সংস্থাগুলো চলমান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনমতো তাৎক্ষণিক সাহায্য করছে। বৃহস্পতিবারও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। ফলে ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু ও নালা-নর্দমার অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন আইওএমের প্রকৌশলীরা।
গত ৯ জুলাই মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ৯৯৮ জন মানুষ এবং ৯১২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইওএমের টিমগুলো গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ছয়টি ভূমিধস, ৮ বার ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত এবং ১৭৪ জন মানুষ গৃহহীন হওয়ার খবর রেকর্ড করেছে।
ইন্টার সেক্টর কোর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) বলছে, মৌসুমী দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে এ বছর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৮ সালের রেকর্ড ছাড়াতে পারে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের মৌসুমে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৫ হাজার।
এ বছরের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। অথচ ২০১৮ সালে সবমিলিয়ে এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ২০০।
এ বছর জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে পুরো জুলাই মাসে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯ হাজার মানুষ।