ধর্ষকরা যেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন না পায় : আইনমন্ত্রী
সামাজিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা যেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন না পান সে বিষয়ে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আজ বুধবার রাজধানীর নিবন্ধন অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে জেলা ও দায়রা জজ এবং সমমর্যাদার বিচারকদের নতুন গাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, সময় এসেছে ধর্ষকদের জেলখানায় রাখার। তাদের প্রতি কোনো করুণা নয়।
বিচারপ্রার্থীদের আশ্বস্ত করে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা নুসরাতের মামলা দেখছেন এবং আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারি এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন (অভিযোগপত্র) পাওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। এখন উচ্চ আদালতের কথা বললে আমাকে বলতেই হয়, সেখানে এ পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন ধরনের। আমার কাছে অনেক তথ্য আছে, বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে এমন সেনসেশনাল মামলা মোকদ্দমার আসামিরাও দেখা গেছে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে।
আনিসুল হক বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। এটার সঙ্গে আমি তাঁকে বলব দেখেন, জামিন দেওয়া হচ্ছে একজন বিচারক ও বিচারপতিদের ডিসক্রেশন। কিন্তু সেই ডিসক্রেশন নিয়েও একটা কথা আছে। এই ডিসক্রেশনটা ব্যবহার করতে হবে লিগ্যালি। আমি শুধু এইটুকু আবেদন করতে পারি, যে অপরাধগুলো হচ্ছে আমার মনে হয় সময় এসেছে একটু কঠোর হওয়ার, সময় এসেছে এদের জেলখানায় রাখার। সে ব্যাপারে বিচার বিভাগকে আমি কোনো সুপারিশ বা আদেশ দিচ্ছি না। সামাজিক পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে আমি শুধু অনুরোধ করছি, এদিকে যেন সকলের মনোযোগটা দেওয়া হয়।’
পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার ঘটনায় যে রায় দেয়া হয়েছে এ নিয়ে বিএনপি বলে আসছে আইন মন্ত্রণালয় এ রায় লিখে দিয়েছে আর আদালত তা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা অভিমত জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় উনাদের সময় উনারা এ ধরনের রায় লিখে দিতেন সে অভিজ্ঞতা থেকে এসব বলছেন। আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি, বিচার বিভাগকে আমরা কোনোভাবেই চাপ দেই না। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন।’
আনিসুল হক ঈশ্বরদীর ঘটনার ব্যাপারে বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি) বলছে, ওইখানে কেউ খুন হয় নাই। নয়জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ওনাদের আমি শুধু মনে করিয়ে দিব, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের তিন ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড প্রদানে খুন করতে হয় না। কেউ যদি খুন হবে এটা জেনে বোমা ছোঁড়ে তাহলে তাকে ফাঁসি দেওয়া যায়। আইনের মধ্যে সেটা আছে।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে, খালেদা জিয়া জামিনযোগ্য অপরাধ করেছেন তারপরও তাঁকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সবাই জানে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালত পাঁচ বছর জেল দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট সে রায়ের আপিলে আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের জেল দিয়েছেন। এতিমখানার টাকা আত্মসাতের জন্য আবার বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের জেল দিয়েছেন। সেটাও জামিনযোগ্য নয়। তার পরও বিএনপি সব সময় ভ্রান্তিমূলক তথ্য জনগণকে দিচ্ছে। বিএনপি নেতারা যে মিথ্যার ওপর রয়েছেন এগুলো সেটারই প্রমাণ।
গাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুগ্ম সচিব গোলাম সারোয়ার, বিকাশ কুমার সাহা ও হাবিবুর রহমান, সলিসিটর জেসমিন আরা, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক খান মো. আব্দুল মান্নানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।