৫৫ ভাগ মানুষ রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ সমর্থন করেনি
রাজধানীতে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধের ফলে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। বিষয়টি সমর্থন করে না বেশির ভাগ মানুষ।
ফেসবুকে এনটিভির ভেরিফায়েড পেজে জরিপে এই মতামত এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার জরিপের বিষয় ছিল ‘রাজধানীতে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ সমর্থন করেন কি?’ জরিপে ২৪ ঘণ্টায় ২৩ হাজারের ওপর ভোট পড়ে। যার মধ্যে ৫৫ ভাগ লোক রাজধানীতে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ সমর্থন করে না এবং ৪৫ ভাগ লোক রাজধানীতে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ সমর্থন করে বলে ভোট প্রদান করে।
গত ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রধান করে গঠিত বিশেষ কমিটির বৈঠকে রাজধানীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় সড়কে ৭ জুলাই থেকে রিকশা চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়ক তিনটি হলো কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ, গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর এবং সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে শাহবাগ। রাজধানীর যানজট কমানোর লক্ষ্যে ঢাকার সড়ক থেকে অবৈধ গাড়ি সরানো ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মধ্যে গতকাল থেকে রিকশাচালক ও মালিকরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে অফিসগামী যাত্রী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন রিকশাচালকদের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নগর ভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
রাজধানীতে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এক জরিপে এই মতামত জানালেন নেটিজেনরা।
এর মধ্যে মো. কবির নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘বিকল্প উপার্জনের ব্যবস্থা সৃষ্টি না করে কারো উপার্জনের উপরে নিষিদ্ধকরণ গনতন্ত্রের পরিপন্থী। ন্যায় সংগত সব দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছি।’
রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ফিরোজ আহমেদ, তিনি মন্তব্য করেন, ‘রিকশা বন্ধ করতেই হবে মহাসড়ক থেকে। সবাই সহযোগিতা করুন। হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। রিকশার বদলে যানবাহন এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে দুর্ভোগ না বাড়ে।’
অনেক পাঠক আবার রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ বিষয়ে ভিন্নধর্মী মন্তব্য করেন। তাঁদের মধ্যে একজন মো. আজিজুল। তিনি লিখেছেন, ‘রিকশা চালকদের ঋণের মাধ্যমে সিএনজি কিনে দেওয়া হউক। এটা কিনে দিলে তাঁরা কিস্তিতে ঋণ শোধ করবে অন্যদিকে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে আর শহর রিকশা মুক্ত হবে।’
সড়কে রিকশাচালকদের অবরোধ বিষয়ে একটু ভিন্নভাবে মন্তব্য করেন বিভিন্ন পাঠক। তাদের মধ্যে সবুজ মুনসী লেখেন ওলি গলি ও শাখা রোড গুলোতে রিকশা থাকবে, মেইন রোডে রিকশা চলাচল সমর্থন করি না। মেইন রোডে রিকশা জান চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করে।
নুর মোহাম্মাদ লেখেন, ‘সড়ক থেকে রিকশা জব্দ করতে হবে এবং উৎপাদন বন্ধ করতে হবে, এতে শহরে বসবাস রত লোকের বিলাসিতা কমবে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষাপাবে, কৃষি কাজে জনবল বৃদ্ধি পাবে।’
রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত বাবন লেখেন, না , ‘কোনো অবস্থাতেই না । এরা সবাই রিকশা মালিকদের প্ররোচনায় রাস্তা অবরোধ করেছে । এরা সবাই কম করে হলেও দশটি অবৈধ রিকশার মালিক । রিকশার বৈধ কাগজ পত্র পরীক্ষা করা শুরু করুণ দেখবেন রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাবে । যত্রতত্র রিকশা চালিয়ে জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে আবার অবরোধ করেও দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে তাই কঠোর হস্তে দমন করার দাবি জানাচ্ছি।’
মো. রাকিব হাসান নামের এক পাঠক রিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন, ‘ঢাকার শহরে, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মতো রিকশাচালকদের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া উচিত। তাহলে জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি হবে না।’
ইশিতা আশা নামের একজন সড়ক অবরোধ সর্মথন করেন না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সমর্থন করি না।তবে সরকারের উচিত তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।এতগুলো মানুষের আয়ের উৎস শুধু এই রিকশা। তাদের পরিবার তাদের ওপর নির্ভর করে ।’
মিহির মণ্ডল নামের একজন সড়ক অবরোধ সর্মথন করেন না বলে লিখেছেন, ‘এটা কোনো ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয় কারণ প্রধান সড়কগুলো থেকে রিকশা সরাতেই হবে, এটার কোনো বিকল্প নেই, তা ছাড়া মাত্র তিনটি রাস্তায় রিকশা বন্ধ করা হয়েছে, এর বাইরে ও অনেক রাস্তা আছে।’
আমিনুল ইসলাম বাচ্চু একটু ভিন্নধর্মী মন্তব্য করে লেখেন , ‘কোনো কিছুই বন্ধ করার দরকার পড়ে না শুধু মানুষের মন মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি ।এই পরিবর্তনের মধ্যে পুলিশের চাঁদাবাজি, গাড়ি চালকদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রী লওয়া, রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, মোটরবাইক চালকদের খামখেয়ালি, পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা ইত্যাদি।’
আবার ইলিয়াস কাঞ্চন খান লেখেন, আমি রাজপথ আটকে মানুষকে কষ্ট দিয়ে নিজের স্বার্থ হাছিল কখনোই সমর্থন করি না। তবে রিকশা তুলে দেওয়ার আগে সিটি করপোরেশন অনেক বড় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ এটা জানা কথা যে রিকশা তুলে দিলে রিকশাচালকরা আন্দোলনে নামবেই। তাই সিটি করপোরেশনের উচিত আগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এবং পথচারীদের জন্য বিকল্প মিনি বাস সার্ভিস আনা। তারপর রিকশা তুলে দিলে আর সমস্যা হতো না। সুতরাং এই অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী। সেই সঙ্গে সিটিং সার্ভিস এবং সিএনজিচালিত অটো রিকশার ভাড়া কমানো দরকার।ফুটপাথ দখল মুক্ত করা দরকার।
তাহমিনা জাহান প্রভা, আয়েশা আশা, উজ্জ্বল আহমেদসহ আরো অনেকে রাজধানীতে রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ সমর্থন করে মন্তব্য করেন। তাঁরা মনে করেন, বিকল্প কিছু করে তারপর একেবারে রিকশা উঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।