দুই মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতনে ঘরছাড়া বৃদ্ধা মা
মাদকাসক্ত দুই ছেলের নির্যাতন ও হুমকিতে প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধা নাজমা বেগম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজ বাড়িতে ফিরতে চান হতভাগ্য এ নারী। আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘এমন কুসন্তান যেন কোনো মা গর্ভে ধারণ না করেন।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে আইন, আদালত ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমন অভিযোগ করেছেন পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্র রোডের বাসিন্দা নাজমা বেগম।
এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী আলমগীর হোসাইন, নাতি মাহাদী হাসান ও আইনজীবী কামরুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে নাজমা বেগম বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে দেবেন্দ্র রোডের ২২/২ নম্বর বাড়ির মালিক আমি। ১৯৯৩ সালের ৬ এপ্রিল আমার স্বামী আবদুল কাদের বেপারী মারা যাওয়ার পর থেকে আমি সম্পত্তি দেখাশুনা করছি। পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমার দুই ছেলে কায়সার আহমেদ ও আবুল কালাম বাড়িটি তাদের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিল। তারা মারধরও করে আমাকে। লোকলজ্জার ভয়ে মুখ বুঝে সহ্য করেছি ছেলেদের অত্যাচার ও নির্যাতন করে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর ১০ জুলাই আমাকে মেরে আহত করে ছেলে কায়সার আহমেদ। উপায় না দেখে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৬ জুলাই মামলা দায়ের করি। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় কায়সার আহমেদ। ওইদিন রাতে দুই ছেলে আমাকে মারধর করে জখম করে। হুমকি দেয় বাড়ি লিখে না দিলে লাশ ফেলে দেওয়ার। পরের দিন পালিয়ে আসি মেয়ের বাড়ি। সেই থেকে খেয়ে না খেয়ে মেয়ে আর আত্মীয়স্বজনের আশ্রয়ে আছি।’
নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যায় ভুগছি। মেয়ে ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে শেষ বয়সে বোঝা হয়ে দিন পার করছি। এ বৃদ্ধ বয়সে নিজের বাড়িতে ইবাদত বন্দেগি করে মরতে চাই। বাড়িতে ফিরতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমার দুই কুপুত্রকে বিচারের মুখোমুখির মাধ্যমে বাড়িতে বসবাসের সুযোগ করে দিবেন।’ তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলে মাদকাসক্ত। মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হেন কোনো কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। আমার স্বামী বেঁচে থাকতে প্রায়ই ছেলে কায়সার তার কাছে টাকা চাইত এবং চুরি করত। একদিন টাকা দিতে না চাইলে কাউসার তাকে পিস্তল নিয়ে ধাওয়া করে। তিনি বলেন, ‘আর সে সময়ই তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।’