৬০ ভাগ মানুষ রাজধানীর তিন সড়কে রিকশা বন্ধের পক্ষে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালানো এক জরিপে অধিকাংশ মানুষ রাজধানীতে রিকশা বন্ধের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। পক্ষের মানুষদের যুক্তির পাশাপাশি বিপক্ষের মানুষেরা রিকশা বন্ধ হলে তাঁদের যে ভোগান্তি পোহাতে হবে, সেটাও বলেন। এর বাইরে কিছু মানুষ রাজধানীর রাস্তায় নিয়ন্ত্রণহীন প্রাইভেটকারের আধিক্যের কথাও বলেছেন।
ফেসবুকে এনটিভির ভেরিফায়েড পেজে জরিপে এই মতামত এসেছে। গতকাল সোমবার জরিপের বিষয় ছিল ‘রাজধানীর তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেন কি?’ জরিপে ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ হাজারের ওপর ভোট পড়ে। যার মধ্যে ৬০ ভাগ লোক রিকশা চলাচল বন্ধের পক্ষে এবং ৪০ ভাগ লোক রিকশা চলাচলের পক্ষে ভোট প্রদান করেন। এ ছাড়া দেড় হাজারের বেশি মানুষ এ বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
গত ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রধান করে গঠিত বিশেষ কমিটির বৈঠকে রাজধানীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় সড়কে ৭ জুলাই থেকে রিকশা চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়ক তিনটি হলো কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ, গাবতলী থেকে আসাদগেট হয়ে আজিমপুর এবং সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে শাহবাগ। রাজধানীর যানজট কমানোর লক্ষ্যে ঢাকার সড়ক থেকে অবৈধ গাড়ি সরানো ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মধ্যে গতকাল থেকে রিকশাচালক ও মালিকরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে অফিসগামী যাত্রী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আজ মঙ্গলবারও সেই বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন রিকশাচালকদের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নগর ভবনে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
রিকশা চলাচল সংক্রান্ত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এক জরিপে এই মতামত জানালেন নগরবাসী।
এর মধ্যে মো. আবুল হাসেম নামের একজন মন্তব্য করেন,‘এরূপ বিকল্প ব্যবস্থা না করে গরিব মানুষগুলোর রিকশা বন্ধ করা উচিত হবে না, কারণ রিকশা ছাড়া চলায় দুই পক্ষের কথা চিন্তা করা উচিত।’
রিকশা চলাচল বন্ধের বিপক্ষে জাকির হোসেন নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘যানজট, অ্যাক্সিডেন্টের প্রধান কারণ এই রিকশা। দুনিয়ায় কোথাও রিকশা মেইন রোডে চলে না। হাঁটার অভ্যাস খুবই কম। লোকজন ধান কাটা রেখে এসে রিকশা চালায়। সব শহরকেন্দ্রিক হলে গ্রাম বাঁচবে কী করে? কঠোর হস্তে সব ঠিক করা উচিত।’
এর ঠিক বিপরীত মন্তব্য করেছেন মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি রাজধানীতে রিকশা চলাচলের পক্ষে। তিনি লিখেছেন, ‘রিকশা রেখে বাকি সব যন্ত্রচালিত যান বন্ধ করে দিলে ভালো হবে। প্রাইভেট সব বাহন বন্ধ করে দিয়ে শুধু সরকারি বাহন নামানো উচিত সারা শহরে। তাহলে অবশ্যই ঢাকা শহরের যানজট বলে কিছু থাকবে না।’
অনেক পাঠক আবার রিকশা চলাচলের পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়ে ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের একজন মো. মাকসুদুর রহমান। তিনি লিখেছেন, ‘রিকশা নিষিদ্ধ করছেন, ভালো কথা! এর সঙ্গে সঙ্গে সব ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রিকশা ও ব্যক্তিগত পরিবহন চলাচল বন্ধ করুন।
রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে রিকশা বন্ধের পক্ষে সাখাওয়াত বাবন লেখেন, ‘হ্যাঁ, পুরো ঢাকাতেই রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হোক। রিকশার কারণে জ্যাম হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা আদায় করছে। দেখার কেউ নাই। কোনো রিকশারই কোনো কাগজপত্র নেই। বিষয়টা সত্যিই ভয়ংকর। রিকশাগুলো লিংক-রোডে চলুক। কিন্তু সকল প্রধান সড়কেই রিকশা বন্ধ করুন।’
অনীকা খান নামের এক পাঠক রিকশা চলাচলের পক্ষে মন্তব্য করে বলেন, ‘যারা মধ্যবিত্ত, তাদের জন্য রিকশা ছাড়া কোনো উপায় নেই, সব ধরনের রাস্তা দিয়ে রিকশা চলতে পারে। বাস, প্রাইভেটকার তো সব জায়গায় চলতে পারে না। রিকশা বন্ধ করা মোটেও ঠিক হবে না। আমরা যারা স্টুডেন্ট, আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হবে।’
এ আর মোর্তজা নামের একজন প্রাইভেট গাড়ি চলাচল বন্ধের পক্ষে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘রিকশার আগে প্রাইভেট গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হোক, মিনিবাসের পরিবর্তে বড় বাস চালু করা হোক। ফুটপাত হকার্সমুক্ত করা হোক, মূল সড়কে সিএনজি বন্ধ করা হোক। ঘিঞ্জি এলাকা, যেখানে রিকশা না চললেই নয়, সেখানে ট্রাম চালু করা হোক। কোনোভাবেই ভিআইপি চলাচলে রাস্তা বন্ধ করা যাবে না।’
মো. রিফাত হাসান নামের একজন রিকশা বন্ধের পক্ষে লিখেছেন, ‘... আমিও ব্যক্তিগতভাবে চাই না এ দেশে এই বাহন থাকুক। দিন দিন মানুষ সভ্য হচ্ছে আর কোনো সভ্য মানুষ, অন্য একজন মানুষ দিয়ে নিজেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তায় করতে পারে না। এটা একটা অমানবিক বাহন।’
কারিমুন নাইমা, ফারুক আহমেদ, গাজীউল শ্যামলসহ আরো অনেকে প্রাইভেটকার বন্ধের জন্য মন্তব্য করেন। তাঁরা মনে করেন, প্রতি পরিবারের একের অধিক প্রাইভেট গাড়ি নিষিদ্ধ করা জরুরি। তারপর বিআরটির অনুমোদনহীন সব গাড়ি ঢাকা থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত।