শিশু হত্যা : মাসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড রদ, খালাস
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় দেড় বছর বয়সী শিশু ডিপজলকে পানিতে ফেলে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিশুটির মাসহ তিনজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামিদের আপিল মঞ্জুর এবং ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে এ রায় দেন।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাইফুর রহমান রাহি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ মান্নান মোহন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম।
আদালত রায়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়া হলো।’
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক খান ফরিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার বাদী শিশুটির বাবা নিজেই বলেছেন, ঘটনার দিন শিশু ডিপজল তার মায়ের সঙ্গে রাতে ঘুমিয়ে ছিল। সঙ্গে শিশুটির নানিও ছিলেন। এক কক্ষবিশিষ্ট কক্ষ হওয়ায় আমি ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু আসামি মনির মোল্লা হত্যা করেছেন কি না এ বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া মামলার চাক্ষুস সাক্ষী না থাকায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।’
অপর আইনজীবী এম এ মান্নান মোহন বলেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যে গরমিল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ডেথ রেফারেন্স রিজেক্ট করা হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে।
এর আগে ২০০৪ সালের ২১ এপ্রিল শিশু ডিপজল হত্যা মামলায় বাগেরহাটের দায়রা জজ আদালত মামলার বাদী ইকু বিশ্বাসের স্ত্রী ও ডিপজলের মা লতিফা বেগম, একই গ্রামের আয়েন উদ্দিন মোল্যার ছেলে মনির মোল্যা ও লুৎফর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগমকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তাদের মধ্যে মনির মোল্যা ও নাজমা বেগম সম্পর্কে ভাইবোন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, লতিফা বেগমের সঙ্গে প্রতিবেশী মনির মোল্যার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে ঝগড়ার পর স্ত্রী লতিফা বেগমকে মারধর করেন ইকু বিশ্বাস। পরকীয়ায় বাধা ও মারধরের ঘটনায় আসামিরা ইকু বিশ্বাসের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
২০০৫ সালের ১২ এপ্রিল ভোরে ডিপজল নিখোঁজ হয়। পরের দিন বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই মোল্লাহাট থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়।
তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর মনির মোল্যা ও নাজমা বেগমকে আসামি করে মোল্লাহাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন ইকু বিশ্বাস। তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১০ মে এজাহারভুক্ত দুই আসামি ও শিশুটির মা লতিফা বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
এরপর বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল রায় ঘোষণা করা হয়। পরে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে আজ আদালত এ আদেশ দেন।