‘নির্দয় পশুর’ সামনে পড়েছিল ছোট্ট সায়মা
সাংবাদিকদের সামনে যখন হারুন অর রশিদকে হাজির করা হয় তখন তার পরনে ছিল সাদা শার্ট আর লুঙ্গি। দুই পাশে ছিলেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সদস্যরা। চোয়াল ভাঙা লোকটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
এই লোকটিকেই ওয়ারীর ছোট্ট শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিবি জানিয়েছে এই হারুনই মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি। হারুন ছোট্ট সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন বলেন, ‘হারুন মেয়েটার সঙ্গে নির্দয়ভাবে পশুর মতো আচরণ করে।’
আজ রোববার কুমিল্লার ডাবরডাঙা এলাকা থেকে হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। হারুন সায়মাদের বাড়ির আটতলার বাসিন্দা পারভেজের খালাতো ভাই। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হারুন সায়মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে এক মাস ধরে হারুন ওই ভবনে পারভেজের বাসাতেই থাকত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানায়, প্রলোভন দেখিয়ে সায়মাকে ওই ভবনের একটি নির্মাণাধীন ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় হারুন। তারপর সায়মাকে পাশবিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে হারুন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।
মো. আবদুল বাতেন বলেন, ‘ লিফটে করে নামার সময় হারুনের সঙ্গে মেয়েটার (সায়মা) দেখা। তারপর তাকে প্রলোভন দেখিয়ে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়; বলে ছাদ দেখাবে সে। নিয়ে গিয়ে তাকে নির্যাতন করে এবং তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শিশুটির মুখ চেপে ধরে। মেয়েটার সঙ্গে নির্দয়ভাবে পশুর মতো আচরণ করে। সে যখন বুঝল মেয়েটি মরে গেছে ওই সময় তার গলায় রশি পেঁচিয়ে কিচেনের মধ্যে সিঙ্কের নিচে রেখে দেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন মাকে বলে শিশু সায়মা আট তলায় ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের শিশুর সঙ্গে খেলতে যায়। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটেই সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের।’
গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রাম এলাকার ওই ভবনের নয়তলার ফ্ল্যাট থেকে শিশু সামিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির বাবা আবদুস সালাম জানান, তাঁর চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সামিয়া। সে একটি স্কুলে নার্সারিতে পড়াশোনা করত। তাঁরা ভবনের ছয়তলায় থাকেন। সন্ধ্যার পরে শিশুটি খেলাধুলার কথা বলে ওপরের ফ্ল্যাটে যায়। কিন্তু অনেক পরও সে ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। পরে নয়তলার একটি খালি ফ্ল্যাটের ভেতর গলায় রশি বাঁধা অবস্থায় মেয়ের মরদেহ দেখতে পান তাঁরা।