দুই সাংবাদিককে দুদকের পাঠানো নোটিশের কার্যকারিতা নেই
প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা জানতে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার এবং প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক ইমরান হোসেন সুমনকে দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোটিশের আর কার্যকারিতা নেই।
আজ বৃহস্পতিবার ক্র্যাবের দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাজী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আজ ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়েরের সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বৈঠক হয়।
ক্র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠক শেষে আবুল খায়ের সাংবাদিকদের জানান, ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। দুই সাংবাদিককে পাঠানো দুদকের নোটিশের কোনো কার্যকারিতা নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুদক থেকে দুই সাংবাদিককে পাঠানো ওই নোটিশের কার্যকারিতা আর নেই।’
গত ২৪ জুন দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠানো হয় এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমনকে। নোটিশটিতে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ২৬/০৬/২০১৯ তারিখ বুধবার ১০.০০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
পরের দিন মঙ্গলবার শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একই চিঠি পাঠানো হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে। তাঁকেও পরদিন বুধবার দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয়। তবে তাঁর নামে পাঠানো নোটিশের শেষ বাক্যে বলা হয়, ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’
ইমরান হোসেন সুমনকে শুধু কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে অনুরোধ জানানো হয়। উপস্থিত না হলে ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু দীপু সারোয়ারের চিঠিতে বলা হয়েছে।
ওই সাংবাদিককে চিঠি দেওয়ার প্রতিবাদে ২৬ জুন সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। দুদকের চিঠি প্রত্যাহার করাসহ চার দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন সাংবাদিকরা। কিন্তু দুদক সেই চিঠি প্রত্যাহার করেনি। উল্টো ইমরান হোসেন সুমনকে পাঠানো চিঠিতে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ বাক্য না লেখায় দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় দুদক। ২৬ জুন বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) জহির রায়হান ওই নোটিশ দেন।
নোটিশে বলা হয়, “আপনি শেখ মো. ফানাফিল্যা (পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন) কমিশনের পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের নিকট থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুসন্ধান টিমের প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আপনি অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য শ্রবণ ও গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে মর্মে গত ২৫ জুনে নোটিশ প্রদান করেন। একই অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য শ্রবণ ও গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে এটিএন নিউজের ইমরান হোসেন সুমনকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো মর্মে গত ২৫ জুনে (হবে ২৪ জুন) নোটিশ প্রদান করেন। ইমরান হোসেন সুমন বরাবর প্রেরিত নোটিশে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ মর্মে উল্লেখ করেননি, যা অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রচলিত নোটিশের ফরম্যাট বহির্ভূত।”
নোটিশে আরো বলা হয়, ‘আপনি উপর্যুক্ত একই বিষয়ে বর্ণিত দুজন ব্যক্তির একজনকে প্রচলিত ফরম্যাট অনুযায়ী এবং অপরজনকে প্রচলিত ফরম্যাট বহির্ভূত ভিন্নতর নোটিশ প্রদান করে আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা অসদাচরণের শামিল।’