ভৈরবে দুই দিনব্যাপী এনটিভির বর্ষপূর্তি পালিত
বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব আর দেশপ্রেমকে ধারণ করে, ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ দীপ্তপদে এগিয়ে চলেছে এনটিভি। তাই সামাজিক, রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো সংকট কিংবা প্রতিকূলতা এনটিভির পথ চলায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না। এনটিভি তার আপন মহিমায় দেশ-বিদেশের কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এনটিভি কেবল ১৬ বছর নয়, শত বছরও হয়তো পাড়ি দিতে পারবে অবলীলায়।
দেশের অন্যতম দর্শকনন্দিত স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভির ১৬ বছর পেরিয়ে ১৭ বছরের পদার্পণের শুভক্ষণে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা এসব অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তাঁরা এইসব অনুষ্ঠানমালা থেকে এনটিভির অব্যাহত জয়যাত্রা কামনা করেন। প্রশংসা করেন সংবাদ, টকশো, বিষয়ভিত্তিক রিয়েলিটি শো, ইসলামী অনুষ্ঠানসহ মানসম্মত বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং এনটিভি অনলাইন পোর্টালেরও। কেবল সবার আগে নয়, সবচেয়ে তথ্যবহুল এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য।
অতিথি বক্তারা তাঁদের আলোচনায় এনটিভির পাশাপাশি স্থানীয় স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজ আমিনের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সততা এবং নিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা তাঁর তৃণমূল থেকে প্রান্তজনের খবর তুলে এনে পরিবেশনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তাঁর দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতাকে তাঁরা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই নিরঅহংকার, পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ও পরিশ্রমী সংবাদকর্মীকে বেঁছে নেওয়ায় এনটিভি কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদও জানান তাঁরা।
গতানুগতিক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিপরীতে সাহিত্য প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজনকে এনটিভি এবং এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজ আমিনের সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা এবং শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার অব্যাহত প্রচেষ্টা হিসেবে পরিগণিত করেন অতিথিরা। আগামীতেও এমন অনুষ্ঠানমালা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করে অতিথিরা সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দেন এ সময়।
অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে গত মঙ্গলবার সকালে ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালা। শুরুতে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে ফিরে আসে। শোভাযাত্রাটিতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, এলিটফোর্স র্যাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ভৈরব পৌরসভা, ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ভৈরব প্রেসক্লাব, ভৈরব রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটি, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ১৭ পাউন্ডের কেক কেটে কাটেন অতিথিরা। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, সংস্থার পক্ষ থেকে এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজ আমিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাংবাদিক মোস্তাফিজ আমিন। এ সময় তিনি বরাবরের মতো নীতি ও আদর্শ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে সবার অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। আমৃত্যু সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে সাংবাদিকতা করে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ভৈরব প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি এসএম বাকী বিল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল বাসেত, অধ্যাপক সাজেদা বাসেত, ভৈরব প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান বাচ্চু, ভৈরব ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আজিজুল হক স্বপন, দৈনিক পূর্বকণ্ঠ সম্পাদক সোহেল সাশ্রু, ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান, র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সহকারী কমান্ডার চন্দন দেবনাথ, ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রেজওয়ান দীপু, ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার, ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির, রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম তাজ ভৈরবী, ভৈরব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. আলামিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ প্রমুখ।
দৈনিক পূর্বকণ্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মো. আলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় এ সময় আরো বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী এমএ সবুর, এসএ কাসেম, চ্যানেল-২৪ ভৈরব প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন মোল্লা, ভৈরব প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান ময়না, দৈনিক খবরপত্রের প্রতিনিধি আব্দুর রউফ, বাংলা টিভির ভৈরব প্রতিনিধি এম. আর সোহেল সেন, সমাধান টিভির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, মাইটিভির ভৈরব প্রতিনিধি শাহনূর, এশিয়ান টিভির ভৈরব প্রতিনিধি আলহাজ্ব সজীব আহমেদ, দৈনিক ইনকিলাবের ভৈরব প্রতিনিধি এমআর রুবেল, আরটিভির ভৈরব প্রতিনিধি মো. আল আমিন টিটু, ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মিজানুর রহমান পাটোয়ারী, দৈনিক পূর্বকণ্ঠ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মিলাদ হোসেন অপু, মুভি বাংলার ভৈরব প্রতিনিধি শামীম আহমেদ, সাপ্তাহিক সময়ের দৃশ্যপট পত্রিকার বার্তা সম্পাদক নাজির আহমেদ আলামিন প্রমুখ।
আলোচনা শেষে মোস্তাফিজ আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় নির্ধারিত বাংলা কবিতা আবৃত্তির প্রতিযোগিতা। এতে উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাছাইকৃত শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ভৈরব আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি ও হাজী আসমত কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় সাবেক প্রধান অধ্যাপক সাজেদা বাসেত এবং কবি ও ছড়াকার প্রভাষক সাইদুর রহমান সাঈফ।
দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত কবিতা আবৃত্তি, গুণীজন সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। এতে আবৃত্তি করেন অধ্যাপক সাজেদা বাসেত, মোস্তাফিজ আমিন, হাদিউল ইসলাম, নিশাত আঞ্জুম সঞ্চারী, তাসনোভা সেলিম প্রমিতি, জান্নাত ইসলাম, নুসরাত জাহান মম, প্রিন্সেস রোজ, অগ্রণী বকশী আদুরী, আফিয়া আরাফি আলিফ, তুনাজিনা আনজুম পূর্ণা, সাদিয়া ও সুমনা হক।
আবৃত্তি শেষে ভৈরব এনটিভি টেলিভিশন দর্শক ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ আব্দুল বাসেতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. সায়দুল্লাহ মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন, ভৈরব ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আজিজুল হক স্বপন, ভৈরব বইমেলা পরিষদের সভাপতি আতিক আহমেদ সৌরভ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ।
ভৈরব উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে ভৈরব অনলাইন প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজ আমিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সাংবাদিকরা। পরে মোস্তাফিজ আমিনে সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অতিথি ছাড়াও বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী ও অভিনেতা সাইদুর রহমান বাবলু ও দৈনিক পূর্বকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মো. আলাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রথমে এই বছরের গুণীজন হিসেবে সংবর্ধিত অধ্যাপক সাজেদা বাসেতের জীবনী পাঠ করেন নিশাত আঞ্জুম সঞ্চারী। এ সময় তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। পরে তাঁর হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা।
সম্মাননা শেষে অধ্যাপক সাজেদা বাসেত অত্যন্ত আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়ায় এনটিভি, এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজ আমিন এবং পুরো ভৈরববাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। দীর্ঘদিন অবাধ সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ করে দেওয়ায় ধন্যবাদ এবং বিশেষ কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন তাঁর স্বামী অধ্যক্ষ আব্দুল বাসেতের প্রতিও।
সব শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণের পর্ব। এ পর্যায়ে কবিতা আবৃত্তি ক বিভাগ থেকে যৌথভাবে প্রথম হয় রাবসা বিনতে রশিদ ও নুসরাত জাহান মম। যৌথভাবে দ্বিতীয় হয় আরাফ চৌধুরী সাবিত ও আরাবি আহমেদ অমিয় এবং যৌথভাবে তৃতীয় হয় অগ্রণী বকশী আদুরী ও আফিয়া আশরাফি আলিফ।
কবিতায় খ বিভাগ থেকে প্রথম হয় তাসনোভা সেলিম প্রমিতি। দ্বিতীয় হয় জান্নাত ইসলাম। আর যৌথভাবে তৃতীয় হয় তুনাজিনা আনজুম পূর্ণা ও সাদিয়া। কবিতা আবৃত্তি গ বিভাগ থেকে প্রথম হয় নিশাত আঞ্জুম সঞ্চারী। দ্বিতীয় হয় সুবর্ণ এবং যৌথভাবে তৃতীয় হয় সাদিয়া ও সুমনা হক। এ সময় অতিথিরা রওশন মোস্তাফিজ লাকীর সহযোগিতায় বিজয়ী আবৃত্তিকারদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন।