ভাগ্নের এফডিআরে ডিআইজি মিজান নমিনি কেন?
মাহমুদুল হাসান (পুলিশের বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের ভাগ্নে) দুই বছর ধরে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে চাকরি করছেন। এর আগে তিনি ব্যবসা করতেন। চাকরি করে তিনি কোনো সম্পদ অর্জন করেননি। চাকরির আগে ব্যবসা করে সম্পত্তি করেছেন। তাঁর ইনকাম ট্যাক্স ফাইল আছে। আর মামলার সম্পদগুলোর আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান। তিনিই নামে-বেনামে সম্পদ কিনেছেন। এ সম্পর্কে আসামি মাহমুদুল হাসান কিছুই জানেন না।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েসের আদালতে জামিন শুনানির সময় মাহমুদুল হাসানের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু এ ভাবেই শুনানি করে আদালতকে বলেন।
শুনানির সময় বিচারক আসামি মাহমুদুল হাসানের আইনজীবীকে প্রশ্ন করে বলেন, এজাহারে বলা আছে, আসামির নামে ব্যাংকে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করা আছে। তাঁর নমিনি আসামি ডিআইজি মিজান কেন?
তখন আইনজীবী বলেন, এ মামলার কোনো সম্পত্তি সম্পর্কে আসামি মাহমুদুর রহমান কিছুই জানেন না। তিনি ব্যাংকের কোনো কাগজে স্বাক্ষরও করেননি। আসামিকে জামিন দিলে পলাতক হবেন না।
এর পরেই দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে বলেন, আসামি মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ডিআইজি মিজানকে অর্থ ও সম্পত্তি হস্তান্তর-রুপান্তরে সহায়তা করেছেন। এ ছাড়া এ আসামি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে হাইকোর্ট তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে আত্মসর্মণের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই এ পর্যায়ে এ আসামিকে জামিন দেওয়া সমীচীন হবে না। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হোক।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামি মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ২ জুলাই তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় ডিআইজি মিজানকে কারাগারে পাঠান একই আদালত।
গত ১ জুলাই ডিআইজি মিজানুর রহমান হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে তাঁর আবেদন নাকচ করে সঙ্গে সঙ্গে কাস্টডিতে (হেফাজতে) নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া তাঁর ভাগ্নে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশের পরে আজ ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েসের আদালতে মাহমুদুল হাসান আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
গত ১৯ জুন মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান।
গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পরই এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরিচালক এনামুল বারবার দাবি করেন, রেকর্ড করা বক্তব্যে তাঁর কণ্ঠ নকল করা হয়েছে। পরে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পৃথক অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক।
নথি থেকে জানা যায়, গত ২৪ জুন তিন কোটি সাত লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগ্নে ঢাকা মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।