স্পিনিং মিলের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় অটো স্পিনিং মিলের তুলা ও সুতার গুদামে গতকালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ দুপুরে আরো দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ছয়জন নিহত হলেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কারখানার এসি প্ল্যান্ট থেকে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
তাঁরা হলেন পাবনার আমিনপুর থানার নান্দিয়ারা গ্রামের কেরামত সরদারের ছেলে সুজন সরদার (৩০) ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার ভুবনপোড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. আবু রায়হান (৩৫)। তাঁরা দুজনই এসি প্ল্যান্টের শ্রমিক ছিলেন।
নিহত সুজন ও রায়হানের স্বজনরা জানিয়েছেন, সুজন আকারে লম্বা ছিলেন এবং আবু রায়হান খাটো ছিলেন। পুড়ে যাওয়া অঙ্গার দেহ একটি লম্বা ও অপরটি একটু খাটো প্রকৃতির হওয়ায় তাঁরা অঙ্গার দেহগুলো সুজন ও রায়হানের বলে নিশ্চিত করেন।
এদিকে, আজ ভোরে কারখানার ভেতর থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই তিনজনের পরিচয় মিলেছে। তাঁরা হলেন শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে আনোয়ার (২৭), একই উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের হাছেন আলীর ছেলে শাহজালাল (২৬) ও কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার ভান্নারা গ্রামের মৃত শামছুল হকের ছেলে সেলিম কবির (৪২)।
এ ছাড়া গতকাল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আগুন নেভাতে গিয়ে ওই কারখানার শৌচাগারের ভেতরে আটকা পড়েন নিরাপত্তাকর্মী রাসেল মিয়া (৪৫)। আগুনের লেলিহান শিখার কারণে সেখান থেকে বের হতে না পেরে ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শৌচাগারের ভেতরেই মারা যান তিনি। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দেয়াল ভেঙে লাশ উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
নিহত রাসেল মিয়া ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উলুন এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই কারখানার কোয়ার্টারে থেকে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নয়নপুর এলাকার অটো স্পিনিং মিলের তুলার গুদামে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠলে কারখানার কর্মীরা হুড়োহুড়ি করে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে বেশ কয়েকজন আহত হন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের শ্রীপুর, জয়দেবপুর ও ভালুকা স্টেশনসহ ১৮টি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। পানি সংকট ও কারখানার অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। বিকেলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পানি সংকটের কারণে আগুন আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।