নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বৃদ্ধার মামলা চালানোয় বিচারকের দুঃখ প্রকাশ
বৃদ্ধার মামলা পরিচালনা করায় হাইকোর্টে এসে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. আল মামুন দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকার পরও অশীতিপর রাবেয়া খাতুনের মামলার কার্যক্রম চালানোর কারণে বিচারক দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যার জন্য আগামী ১৭ জুলাই দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ মামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী জুলহাস জীবিত না মৃত, এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বিচারক মো. আল মামুনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি আটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
শুনানিতে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নিম্ন আদালতের প্র্যাকটিস পেশকার আদেশ লিখে দেন, বিচারক স্বাক্ষর করেন। আমরা পেশকারকে শোকজ করব। তারপর এ বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে পারব।’
তখন আদালত বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা বিচার বিভাগের অংশ। আপনাদের সুনাম হলে বিচার বিভাগের সুনাম হয়। আবার দুর্নাম হলে বিচার বিভাগের দুর্নাম হয়।’
এ পর্যায়ে বিচারক মো. আল মামুনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন আদালত। শতবর্ষী বৃদ্ধার আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল রাবেয়া খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করেন।
এর আগে সকালে ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে হাজির হন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. আল মামুন।
এর আগে গত ২৬ জুন উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও অস্ত্র মামলার কার্যক্রম চালানোয় ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. আল মামুনকে তলব করা হয়। আজ ৩ জুলাই তাঁকে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাহাবউদ্দিন মিয়াকেও হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
‘অশীতিপর রাবেয়া : আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেন আইনজীবী মো. আশরাফুল আলম নোবেল। এতে বলা হয়, অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে অশীতিপর রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
২০০২ সালের ২ জুন দায়েরকৃত এ মামলায় রাবেয়া গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাস কারাভোগ করেন। পরে জামিনও পান। তাঁকেসহ দুই আসামি জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ শুরু হয় মামলার বিচার। কিন্তু দেড় যুগেও মামলার বিচার শেষ না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে গত ৩০ এপ্রিল মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিতের পাশাপাশি নথি তলব করেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ থাকার পরও মামলার কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি নথিতে উল্লেখ থাকায় এ তলবের আদেশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ২০০২ সালে মামলা দায়েরের এজাহারে রাবেয়া খাতুনের বয়স উল্লেখ করা হয় ৬০ বছর। সে হিসেবে এখন তাঁর বয়স হবে ৭৮ বছর। তবে আইনজীবীর দাবি রাবেয়া খাতুনের বয়স প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই।
এ আদালত রাবেয়া খাতুনের ভোটার আইডি কার্ড দাখিলের নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া মামলার অন্যতম আসামি জুলহাস মিয়া মারা গেছেন কি-না, সে বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।