‘ওষুধ দিচ্ছেন, এতে কাজ হচ্ছে কি না খবর রাখেন?’
ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডে যথাযথভাবে ওষুধ ছিটানোর পর আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তার ফলাফল আদালতকে জানাতে দুই সিটি মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের জানান,ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
ঢাকার পরিবেশ নিয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা অপর এক রিট আবেদনের শুনানিকালে আদালত এই আদেশ দেন।
মামলার শুনানিকালে সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ‘ডেঙ্গুর ব্যাপকতা তো বেড়ে গেছে। কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? মন্ত্রী,সাংসদ,বিচার বিভাগের অনেকে ও জনসাধারণ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ফগিং কার্যক্রমও দেখা যায় না। আপনারা ওষুধ দিচ্ছেন,এতে কাজ হচ্ছে কি না খবর রাখেন? মশা নিয়ন্ত্রণে কি ওষুধ ব্যবহার করেন? কাজ হয় না? পদক্ষেপের কথা বলছেন, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে কে? ২৬ জুন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা যেন কার্যকর হয়-এটি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন।’
‘ঢাকার বাতাসে নতুন বিপদ’ শিরোনামে গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটি যুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২৭ জানুয়ারি রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর রাস্তাসহ নির্মাণাধীন জায়গা ঘিরে দেওয়া, ধুলামাখা স্থানে দুবেলা পানি ছিটানো ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু মশার প্রকোপ রোধে দশ দফা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে, যা আজ শুনানিতে অনুষ্ঠিত হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদন তুলে ধরেন আইনজীবী নুরুন্নাহার আক্তার। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে আসা দশ দফার মধ্যে ওয়ার্ড ভিত্তিক সকাল ড্রেন পরিষ্কার করা ও ড্রেন প্রবাহমান রাখা এবং এডিস মশার উৎসসমূহ অপসারণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও অঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সকল পরিচ্ছন্ন পরিদর্শকদের ওয়ার্ড ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়ার কথাও রয়েছে।
পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুসারে দুই সিটি করপোরেশন পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিবেদনে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা রোধে ২৪ জুন নেওয়া দশ দফা পদক্ষেপের কথা বলা হয়। হাইকোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশাসহ মশক নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং মাঠপর্যায়ে পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৭০৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারিতে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১১৮, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪৪, মে-তে ১৩৯ জন ভর্তি হন। শুধু জুন মাসেই এ পর্যন্ত ৪৪০ জন ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ দিনে গড়ে ১৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ ও ২০ জুন ৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে এপ্রিলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে ৫৮৭ জন বাড়ি ফিরে গেছেন। গতবছর এ রোগে ৯ হাজার ২২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ২৪ জনের মৃত্যু ঘটে।