কারাগারে পাঠানোর নির্দেশে ডিআইজি মিজানের মুচকি হাসি
তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস এ আদেশ দেন।
জামিন আদেশের আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে কড়া পুলিশি পাহারায় হাজির করা হয়। এর পরে আদালতের এজলাসে তাঁকে পুলিশি পাহারায় নেওয়া হয়। আদালতে প্রবেশের পর থেকেই খুবই আত্মবিশ্বাসী ও হাসিমুখে ছিলেন ডিআইজি মিজান। তিনি আদালতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে খুব হাসিমুখে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে তিনি পকেটে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে তাঁর আইনজীবীকে ফোন দেন। সে ফোনের পরেই উপস্থিত আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করলে তিনি ফোন রেখে দেন। আইনজীবীরা আদালতে আলোচনা শুরু করেন, একজন আসামির পকেটে মোবাইল ফোন থাকে কীভাবে?
এর পরেই বেলা ১১টায় তাঁর আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী আদালতে প্রবেশ করেন। তিনি আসার পরে জামিন শুনানি শুরু হয়। শুনানির সময় ডিআইজি মিজান কাঠগড়ায় ওঠেন।
ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানিতে বলেন, ‘ডিআইজি মিজান স্বীকৃতি মতে দায়িত্বশীল পদে ছিলেন। তিনি ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন এবং সেখান থেকে তিনি কোয়ালিফাই হয়ে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) মাধ্যমে পুলিশে যোগ দিয়েছেন। তিনি পুলিশে অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছেন এবং জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাই আপনি যদি বিজ্ঞ আদালত যেকোনো শর্তে জামিন দেন, তাহলে তিনি জামিনের অপব্যবহার করবেন না এবং তিনি তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওপর নিয়মিত ট্যাক্স দেন।’
শুনানিতে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ‘দুদকের পক্ষ থেকে যে মামলা করা হয়েছে, অভিযোগটি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। মানি লন্ডারিং, ঘুষ দেওয়া ও সম্পদের হিসাব বিবরণীতে আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। মামলার প্রাথমিকভাবে ওনার অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।’
‘মিজানুর রহমান একজন সম্মানিত ব্যক্তি। দেশে-বিদেশে ওনার অনেক প্রশংসা রয়েছে। আসামি তাঁর সমস্ত সম্পদের হিসাবের বিবরণ আদালতে দাখিল করেছেন। এ ছাড়া তিনি বয়স্ক একজন মানুষ, শারীরিকভাবে অসুস্থ। মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা জামিনযোগ্য ধারা। আসামি জামিন পেলে জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করবেন না।’
‘বিজ্ঞ আদালত আপনার সামনে যে এজাহার দেওয়া আছে, তার সমর্থনে কোনো ডকুমেন্ট আপনার সামনে নাই। প্রসিকিউশনকে প্রথমেই বলতে হবে, এ টাকার কত বহির্ভূত আর কোন টাকাটা মানি লন্ডারিংয়ের মধ্যে পড়ে। আমরা এবার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী দেখব, এটায় কী সংজ্ঞা দেওয়া আছে। সে সংজ্ঞা অনুযায়ী অনেকগুলো ক্যাটাগরি দেওয়া আছে। সে আইন অনুসারে জামিনের আবেদন করছি।’ বলছিলেন ডিআইজি মিজানের আইনজীবী।
পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানকে আজ মঙ্গলবার কড়া পুলিশি পাহারায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘দুদক যে এজাহার দায়ের করেছে, তা শতভাগ ইনকোয়ারি (তদন্ত) করে। কমিশন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এ এজাহার দায়ের করেছে। আসামি চাকরিজীবনে কত টাকা আয় করতে পারবেন, তা কমিশনের জানা রয়েছে। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমেই তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া দুদকের করা মামলার সবকটি ধারা জামিন অযোগ্য। দুদক আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে, তার সত্যতা পেয়েছে। সর্বোপরি আসামি মিজানুর রহমানের জামিনের বিরোধিতা করছি।’
শুনানি শেষে বিচারক আসামি মিজানুর রহমানের জামিনের আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদেশের পরেই কাঠগড়ায় মিজানুর রহমান মুচকি হেসে ওঠেন। এর পরেই তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার ডিআইজি মিজানুর রহমান হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে তাঁর আবেদন নাকচ করে সঙ্গে সঙ্গে কাস্টডিতে (হেফাজতে) নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া তাঁর ভাগ্নে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আগাম জামিন আবেদন করেন মিজানুর রহমান। তাঁর পক্ষে আবেদনটি করেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
গত ১৯ জুন মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করার নির্দেশ দেন আদালত।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।
গণমাধ্যমে বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পরই এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরিচালক এনামুল বারবার দাবি করেন, রেকর্ড করা বক্তব্যে তাঁর কণ্ঠ নকল করা হয়েছে। পরে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পৃথক অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক।