হলি আর্টিজানে হামলা : ‘চার মাসের মধ্যে বিচার শেষ হবে’
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার তিন বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। সেদিনই উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপত্র ‘আমাক’ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’।
এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার পরেই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে দুই দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ মামলায় গত বছরের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর গুলশান হামলা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আট আসামি বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিজানে অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া জীবিত আটজনের মধ্যে ছয়জন কারাগারে এবং বাকি দুজন পলাতক। পলাতক দুই আসামি হলেন শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি হলেন—রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
এ ছাড়া বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন—তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
অভিযোগপত্রের পরেই মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়ে আসে। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর এ আদালতের বিচারক মজিবর রজমান আট জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
এ পর্যন্ত মামলায় ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামীকাল ২ জুলাই মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটি আদালতে বদলি হয়ে আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। মামলার অভিযোগ গঠনের পর ২০ থেকে ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে পলাতক দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়। পলাতক দুই আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ লিগ্যাল এইড থেকে আইনজীবী নিয়োগ করেন। এরপর গ্রেপ্তারকৃত ওই দুই আসামি নিজস্বভাবে আইনজীবী নিয়োগ করে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরো বলেন, ‘এ মামলায় প্রত্যেক সাক্ষীকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেছেন। যেভাবে মামলাটির বিচারকাজ এগিয়ে চলছে, তাতে আমরা আশা করছি, আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হয়ে যাবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মামলার কোনো সঠিক সাক্ষ্যপ্রমাণ এখন পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এ মামলায় ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। এদের মধ্যে কেউই আসামিদের নাম বলেননি। আসামিদের কাছ থেকে কোনোকিছু উদ্ধার হয়েছে মর্মে আদালতের নথিপত্রে নেই।’