মুখে কালো কাপড় বেঁধে দুদক গেটে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
দুই সাংবাদিককে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপত্তিকর চিঠির প্রতিবাদে আজ রোববার দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে তৃতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করেন। অবিলম্বে ওই চিঠি প্রত্যাহার না করলে সাংবাদিক সমাজ এক হয়ে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সদস্য ও অন্যান্য সংগঠনের সাংবাদিক নেতারা।
এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, দুদক পরিচালক অত্যন্ত সচেতনভাবে গণমাধ্যমকে দুদকের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। দুদকের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করেছেন। আপনারা যদি গণমাধ্যমকে দুদক থেকে সরিয়ে দিতে চান, রাষ্ট্র অচল হয়ে যাবে। আপনারা নিজেরা পরিশুদ্ধ হোন। তা না হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে। চিঠির আপত্তিকর শব্দগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। সুশাসন ও গণমাধ্যম মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ। রিপোর্টে যদি আপনার আপত্তি থাকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রতিবাদ জানাতে পারেন।
আবু জাফর সূর্য বলেন, যত কঠিন কর্মসূচি দিতে হয়, দেওয়া হবে। এ আগুন তাড়াতাড়ি নেভানোর চেষ্টা করুন।
ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার এটি কোনো নমুনা হতে পারে না। সাক্ষ্য না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি? তার মানে কী? এ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে একটি সরকারবিরোধী গ্রুপ আছে। যারা সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করার পাঁয়তারা করছে। বৃহত্তর আন্দোলন করে প্রত্যাহারে বাধ্য করা হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না। সেখান থেকে সরে আসার আবারও বিনীত অনুরোধ করছি। সাধারণ মানুষ দুদকের অনেক কর্মকর্তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এখনো সময় আছে, কর্মকর্তাদের সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে আসতে অনুরোধ করুন। অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এই আন্দোলন চলবে।
বিক্ষোভে ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দারসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ঘুষ কেলেংকারী নিয়ে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের জেরে ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার এবং প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক ইমরান হোসেন সুমনকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নোটিশে দীপু সারোয়ারকে কার্যালয়ে না এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এর প্রতিবাদেই এই মানববন্ধন।
গত ২৪ জুন দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠানো হয় এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমনকে। নোটিশটিতে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৬/০৬/২০১৯ তারিখ ১০.০০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
পরের দিন মঙ্গলবার শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একই চিঠি পাঠানো হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে। তাঁকেও ২৬ জুন দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয়। তবে তাঁর নামে পাঠানো নোটিশের শেষ বাক্যে বলা হয়, ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’
ইমরান হোসেন সুমনকে শুধু কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে অনুরোধ জানানো হয়। উপস্থিত না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু দীপু সারোয়ারের চিঠিতে বলা হয়েছে।
ওই সাংবাদিককে চিঠি দেওয়ার প্রতিবাদে ২৬ জুন বুধবার সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। দুদকের চিঠি প্রত্যাহার করাসহ চার দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন সাংবাদিকরা। কিন্তু দুদক সেই চিঠি প্রত্যাহার করেনি। উল্টো ইমরান হোসেন সুমনকে পাঠানো চিঠিতে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ বাক্য না লেখায় দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় দুদক। বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) জহির রায়হান ওই নোটিশ দেন।
নোটিশে বলা হয়, “আপনি শেখ মো. ফানাফিল্যা (পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন) কমিশনের পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের নিকট থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুসন্ধান টিমের প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আপনি অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য শ্রবণ ও গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে মর্মে গত ২৫ জুনে নোটিশ প্রদান করেন। একই অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য শ্রবণ ও গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে এটিএন নিউজের ইমরান হোসেন সুমনকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো মর্মে গত ২৫ জুনে (হবে ২৪ জুন) নোটিশ প্রদান করেন। ইমরান হোসেন সুমন বরাবর প্রেরিত নোটিশে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ মর্মে উল্লেখ করেননি, যা অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রচলিত নোটিশের ফরম্যাট বহির্ভূত।’
নোটিশে আরো বলা হয়, ‘আপনি উপর্যুক্ত একই বিষয়ে বর্ণিত দুজন ব্যক্তির একজনকে প্রচলিত ফরম্যাট অনুযায়ী এবং অপরজনকে প্রচলিত ফরম্যাট বহির্ভূত ভিন্নতর নোটিশ প্রদান করে আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা অসদাচরণের শামিল।’
দুদক মহাপরিচালকের নোটিশে বলা হয়, ‘উল্লেখিত কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার কারণ অত্র নোটিশ প্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’