বরিশালে আটক চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে
বরগুনায় স্ত্রীর সামনে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বরিশালের লঞ্চ থেকে আটক চার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় বরিশাল লঞ্চঘাটের ‘এমভি মানামী’ থেকে এই চার যুবককে আটক করা হয়। রাতভর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভোরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম।
আজ শুক্রবার সকালে ওসি বলেন, ‘আটকরা বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা যে নাম-পরিচয় বলেছেন, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে মিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তাদের সঙ্গে আটকদের কোনো মিল নেই। বরগুনার ঘটনার সঙ্গেও তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতার আলামত পাওয়া যায়নি। তাই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
বরিশালের পুলিশ আরো জানিয়েছে, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আসামিরা যাতে বরিশাল হয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য পুলিশ নজর রাখছে। বিশেষ করে লঞ্চগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়েশা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরিফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরিফ বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেছেন। তাঁরা হলেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হাসান, চন্দন এবং সন্দেহভাজন নাজমুল হাসান। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, হাসান মামলার ৯ নম্বর আসামি, চন্দন ৪ নম্বর আসামি। এ ছাড়া নাজমুল হাসানের নাম এজাহারে নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে রিফাতকে দাফন করা হয়। এর আগে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে রিফাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ধারালো অস্ত্রের ছয়টি আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রিফাত শরিফের মৃত্যু হয় বলে জানান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক। ময়নাতদন্ত শেষে সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রিফাতের গলায়, মাথায়, বুকে ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতগুলোর মধ্যে গলায়, মাথায় ও বুকে তিনটি গুরুতর জখম রয়েছে, বাকি তিন-চারটি আঘাতের চিহ্ন ততটা গুরুতর নয়।’
ডা. জামিল আরো বলেন, বিশেষ করে গলার আঘাতের কারণে শরীরের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রগ কেটে গেছে। এর ফলে এতটাই রক্তক্ষরণ হয়েছে, যা সময়ের ব্যবধানে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।