দুদকের চিঠি প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) দুই সদস্যকে দেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। দাবি না মানলে সব সাংবাদিক সংগঠন মিলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ক্র্যাবসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। কর্মসূচি থেকে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতারা।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের। তিনি বলেন, বেশি অনিয়ম করলে তাদের মাথা ঠিক থাকে না। দুদক কর্মকর্তাদের সেই অবস্থা হয়েছে। সাংবাদিকদের এভাবে চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য কী? এর জবাব দিতে হবে দুদক চেয়ারম্যানকে। চিঠি ইস্যুকারী সেই কর্মকর্তাকে দুদক থেকে দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে এবং চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা আমরা সব সাংবাদিক সংগঠন মিলে বৃহত্তর কর্মসূচির প্রস্তুতি নেব।
প্রতিবাদ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। তখন তিনি বলেন, এই চিঠিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে এই চিঠির কোনো কার্যকারিতা নেই। এ নিয়ে আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্র্যাব সভাপতি আবার কথা বলেন। তখন তিনি বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, এই আপত্তিকর চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। আপনারা বলছেন, এই চিঠির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ সরকারি চিঠি কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ হয় না। চিঠি প্রত্যাহার করেন দ্রুত।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন ব্যুরো থাকার সময়ে প্রতিষ্ঠানটি পাপাচারে পূর্ণ ছিল। শুধু গণমাধ্যমের কারণে তারা এখন সুনাম ভোগ করছে। সাংবাদিকদের কারণেই তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তবে এই চিঠি প্রমাণ করল যে, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। এই চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম দুদকের সমালোচনা করে বলেন, দুদক কি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কাজ করে নাকি যারা দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে? সাংবাদিকদের দেওয়া দুদকের চিঠি অত্যন্ত অসম্মানজনক ও আপত্তিকর। এই চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা শুধু একজন পরিচালক নয় ভবিষ্যতে আরো পরিচালকের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।
গত সোমবার দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠানো হয় এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমনকে। নোটিশটিতে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৬/০৬/২০১৯ তারিখ ১০.০০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
পরের দিন গত মঙ্গলবার শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একই চিঠি পাঠানো হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে। তাঁকেও বুধবার দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয়। তবে তাঁর নামে পাঠানো নোটিশের শেষ বাক্যে বলা হয়, ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’
ইমরান হোসেন সুমনকে শুধু কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে অনুরোধ জানানো হয়। উপস্থিত না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু দীপু সারোয়ারের চিঠিতে বলা হয়েছে।
ওই সাংবাদিককে চিঠি দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। দুদকের চিঠি প্রত্যাহার করাসহ চার দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন সাংবাদিকরা। কিন্তু দুদক সেই চিঠি প্রত্যাহার করেনি। উল্টো ইমরান হোসেন সুমনকে পাঠানো চিঠিতে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ বাক্য না লেখায় দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় দুদক। বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) জহির রায়হান ওই নোটিশ দেন।
নোটিশে বলা হয়, “আপনি শেখ মো. ফানাফিল্যা (পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন) কমিশনের পরিচালক (সাময়িক বরখাস্ত) খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের নিকট থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুসন্ধান টিমের প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আপনি অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য শ্রবণ ও গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ারকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে মর্মে গত ২৫ জুনে নোটিশ প্রদান করেন। একই অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য শ্রবণ ও গ্রহণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধি মতে এটিএন নিউজের ইমরান হোসেন সুমনকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো মর্মে গত ২৫ জুনে (হবে ২৪ জুন) নোটিশ প্রদান করেন। ইমরান হোসেন সুমন বরাবর প্রেরিত নোটিশে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ মর্মে উল্লেখ করেননি, যা অনুসন্ধান সংক্রান্ত প্রচলিত নোটিশের ফরম্যাট বহির্ভূত।”
নোটিশে আরো বলা হয়, ‘আপনি উপর্যুক্ত একই বিষয়ে বর্ণিত দুজন ব্যক্তির একজনকে প্রচলিত ফরম্যাট অনুযায়ী এবং অপরজনকে প্রচলিত ফরম্যাট বহির্ভূত ভিন্নতর নোটিশ প্রদান করে আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা অসদাচরণের শামিল।’
দুদক মহাপরিচালকের নোটিশে বলা হয়, ‘উল্লেখিত কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার কারণ অত্র নোটিশ প্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’