এর আগেও কোপাকুপি করেছিল বরগুনার খুনি রিফাত ফরাজী
বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে তাঁর স্বামী নেয়াজ রিফাত শরিফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যাকারী দুজনের একজন হলো রিফাত ফরাজী (২৫)। ২০১৭ সালে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়েছিল সে। শুধু তাই নয়, এর আগে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে কোপাকুপির ঘটনা ঘটিয়েছিল রিফাত ফরাজী।
মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যুক্ত এই রিফাত ফরাজী। পুলিশ তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু প্রতিবারই সে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
বরগুনা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি রোডের মো. দুলাল ফরাজীর বড় ছেলে সে।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডিকেপি এলাকার ডাক্তারবাড়ী রোডের বাসিন্দা বর্তমানে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই রিফাত ফরাজী প্রায় দুই বছর আগে আমার বাসার সামনে বখাটেদের নিয়ে আড্ডা দিত। এ নিয়ে আমার স্ত্রী প্রতিবাদ করায় আমার বাসায় হামলা চালায় রিফাত ফরাজী। প্রতিনিয়ত নেশা করে এবং তার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালীর ছেলেরা থাকে। আমার বাসায়ও চাপাতি নিয়ে হামলা চালিয়েছিল রিফাত ফরাজী। ওই সময় আমার ঘরের আসবাবপত্র কুপিয়ে তছনছ করে হুমকি দিয়ে যায়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু কিছুদিন পরই ছাড়া পেয়ে যায় রিফাত ফরাজী।
রিফাতের প্রতিবেশীরা জানায়, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যুক্ত রিফাত ফরাজী। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে একটি আতঙ্কের নাম রিফাত ফরাজী। রিফাতের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের ওপর হামলা, মারধর রিফাতের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব কারণে কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও অজ্ঞাত কারণে খুব স্বল্প সময়েই মুক্তি পায় সে। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তাহিদুল ইসলাম তারিক (২১) নামের এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে রিফাত ফরাজী।
তাহিদুল ইসলাম তারিক জানান, একদিন সামান্য কথা কাটাকাটি হয় রিফাত ফরাজীর সঙ্গে তার। তখন রিফাত ফরাজী আমাকে কুপিয়ে জখম করার হুমকি দেয়। রিফাত ফরাজীর ভয়ে আমি দেড় মাস রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে না গিয়ে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে বাসায় যাওয়া-আসা করতাম। হুমকি দেওয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে আমাদের বাসায় যাওয়ার পথে রিফাত ফরাজী দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আমার মাথায় গুরুতর জখম করে।
এ ঘটনায় পর তাহিদুল ইসলাম তারিকের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
একই বছর রিফাত ফরাজী বরগুনার হোমিও চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ডিকেপি রোডের বাসার ছাত্র মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে বাসায় থাকা সব ছাত্রদের জিম্মি করে, তাদের ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ রিফাতের বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে মোবাইলগুলো উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ছেলে ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ডিকেপি রোডের আমাদের ভাড়া দেওয়া বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করেন রিফাত ফরাজী। এ ঘটনায় বরগুনা সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ করলে পুলিশ রিফাত ফরাজীর বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে। পরে দুলাল ফরাজী রিফাতের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১৪টি মোবাইলের মধ্যে ১১টি উদ্ধার করেন। আর বাকি তিনটি মোবাইল উদ্ধার করতে না পেরে নতুন মোবাইল কিনে দিয়ে থানা থেকে মুক্তি পান।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মারজানা মনি বলেন, ২০১৭ সালের রমজানে আমার একমাত্র ছোট ভাই হাফেজ মো. মেহেদী হাসান বরগুনার হোমিও চিকিৎসক আলাউদ্দিন ডাক্তারের বাসা সংলগ্ন মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ায়। তখন রিফাত ফরাজী একদিন মেহেদীর কাছ থেকে স্যামস্যাং গ্যালাক্সি কোর প্রাইম মডেলের বিদেশ থেকে আনা একটি ফোন ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি রিফাত ফরাজীর মা-বাবাসহ স্থানীয় অনেককে জানানোর পরও আমার ভাইয়ের মোবাইলটি কেউ উদ্ধার করে দিতে পারেননি। পরে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করার পর সাড়ে সাত হাজার টাকার বিনিময়ে মোবাইলটি ফিরিয়ে দিয়ে হুমকি দেয় রিফাত ফরাজী। পরে রিফাত ফরাজীর হুমকিতে ওই এলাকা ছেড়ে একপ্রকার পালিয়ে আসে আমার ভাই।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, রিফাত শরীফ নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রিফাত ফরাজীর অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, আমি এখানে যোগ দিয়েছি মাত্র সাত মাস হয়েছে। আমি যোগ দেওয়ার পর এমন কিছু ঘটেনি। যেহেতু আমি আসার আগে এসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর প্রমাণ খুঁজে বের করে রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।