ভৈরব থানায় শারীরিক নির্যাতন, ১৪ পুলিশের বিরুদ্ধে দুই মামলা
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় শারীরিক নির্যাতন ও ঘুষ দাবির অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. সায়েদুর রহমান খান আজ বৃহস্পতিবার সকালে ওই আদেশ দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেশন সহকারী মো. তরিকুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে ভৈরব উপজেলার ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা বাদী হয়ে এবং ঘুষ দাবির অভিযোগে একই এলাকার শেখ সাদিয়া সুলতানা বাদী হয়ে গতকাল আদালতে মামলা করেন। দুটি মামলাতেই বাদীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. রহম আলী।
শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা তাঁর আর্জিতে উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ভৈরব থানার পুলিশ একটি হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁর স্বামী শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে। পরে হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে ওই বছরের ১১ মার্চ মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু জেলের ভেতরে থাকা অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখের ঘটনায় করা একটি মাদক মামলায় তাঁর স্বামীকে আসামি করা হয়। তাঁর স্বামীকে আসামিসহ পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে এবং চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল আদালতে তা গৃহীত হয়। এর জের ধরে চলতি বছরের ১৮ মে শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে থানায় নিয়ে পুলিশের একটি দল সম্মিলিতভাবে তাঁর ওপর মারাত্মক শারীরিক নির্যাতন করে। বর্তমানে শেখ আশরাফুল আলম বিজন ওই মামলায় কারাগারে আছেন।
এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিজনের স্ত্রী শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা বাদী হয়ে ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করে গতকাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’-এর ১৩ ও ১৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুখলেছুর রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বাহালুল খান, আটজন উপপরিদর্শক (এসআই) যথাক্রমে মো. আবদুল আজিজ, অভিজিৎ চৌধুরী, মুখলেছুর রহমান, মতিউজ্জামান, আবুল খায়ের, এস এম জালাল বিন আমির, শেখ আমজাদ ও মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা এবং চারজন কনস্টেবল যথাক্রমে মো. মোমেন মিয়া, মো. আবির সরকার, মমতাজ উদ্দিন ও নিজাম। গতকাল শুনানি শেষে বিচারক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আজ কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন।
অপর মামলার বাদী শেখ সাদিয়া সুলতানা তাঁর লিখিত এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ভৈরব থানার পুলিশ একটি বিস্ফোরক মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাঁর বড় ভাই শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে। পরে হাইকোর্টের প্রদত্ত জামিনে ওই বছরের ১১ মার্চ মুক্তি লাভ করে। কিন্তু জেলের ভেতরে থাকা অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় তার ভাইকে আসামি করা হয় এবং ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে তাঁর ভাই শেখ আশরাফুল আলম বিজন জামিনে মুক্তি পেয়ে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ভৈরব থানায় ওই মামলার ঘটনার সময়ে কারাগারে থাকার কাগজপত্রাদিসহ তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন। এ সময় পুলিশ এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। অন্যথায় মামলার অভিযোগপত্রে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু ঘুষ না দেওয়ার কারণে তাঁর ভাই শেখ আশরাফুল আলম বিজনকে আসামিসহ পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে এবং চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল আদালতে তা গৃহীত হয়।
এ ঘটনায় শেখ সাদিয়া সুলতানা বাদী হয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুখলেছুর রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. বাহালুল খান ও এসআই আনোয়ার হোসেন মোল্লা—এ তিনজনকে আসামি করে পুলিশের ঘুষ দাবির অভিযোগে মামলা করেন। শুনানি শেষে বিচারক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়কে নির্দেশ দেন।
বাদী শেখ শাহানাজ আক্তার সুমনা জানান, ভৈরব পৌর এলাকার ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমার স্বামী শেখ আশরাফুল আলম বিজন একজন ব্যবসায়ী এবং আমার শ্বশুর মরহুম শাহাজাদা মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দল বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হলেও বিনা কারণে হয়রানি করা হচ্ছে।