৩০ বছর আগের হত্যা মামলা, তিন মাসে শেষ করার নির্দেশ
ত্রিশ বছর আগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা খুনের মামলার স্থগিতাদেশ কার্যক্রম তুলে নিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে করে শিগগিরই এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
১৯৯১ সালে এ মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে গতকাল বুধবার রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষে ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ।
আদালতে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘১৯৯১ সালে এ মামলার সাতটি সাক্ষী হয়েছে। তখন অধিকতর তদন্তের আদেশ হইল। আবেদনকারীর নাম এফআইআর চার্জশিটে ছিল না।’
আদালত বলেন, ‘তাহলে সে কীভাবে সংক্ষুব্ধ হলো? সে কীভাবে হাইকোর্টে আবেদন করল? অধিকতর তদন্তে তার নাম নাও আসতে পারত। রাষ্ট্রপক্ষের উকিল আগের শুনানিতে বলেছিল, ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না। বিষয়টা তো এ রকম। মন্ত্রী সাহেবের ভাগ্নে…এত ক্ষমতাবান তারা! অধিকতর তদন্তে বাধা কোথায়?’
তখন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, মামলার দুই বছর পরে সাক্ষী দিয়েছে।
আদালত বলেন, ‘মাত্র সাতটা সাক্ষী হলো। তদন্ত হলে কী যে হয়। দেখবেন চিকিৎসক হয়তো মারা গেছে। আল্লাহ জানে কী হবে…। এত দিনেও ভিকটিমের পরিবারকে রাষ্ট্র কোনো বিচার দিতে পারেনি।’
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তখন বলেন, ‘আসামি মন্টু আছে তো।’
তখন আদালত বলেন, ‘মন্টু থেকে কী হবে? মন্ত্রী সাহেবের ভগিনার নাম আসলে যে তিনি দোষী হতেন এমন তো না। তদন্ত হতে বাধা কোথায়? সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগসহ সবাই আমরা ভিকটিমের পরিবারকে বিচার দিতে পারিনি। এখন তো ওই রিকশাচালককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পেলেও তিনি কি আসবেন নাকি?’
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিম্ন আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ ভুল—এমন কোনো কথা তাঁরা বলেননি। এখন অধিকতর তদন্তের জন্য টাইমফ্রেম ঠিক করার আবেদন জানাচ্ছি। এরপর আদালত আদেশ দেন।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ‘সগিরা মোর্শেদ সালাম ১৯৮৯ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যান। বিকেল ৫টায় সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তাঁর হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নিজেকে বাঁচাতে দৌড় দিলে গুলি করা হয় তাঁকে। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় ওই দিনই রমনা থানায় মামলা করেন তাঁর স্বামী আবদুস সালাম চৌধুরী। পরে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরে ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় সাতজন সাক্ষীর। সাক্ষ্যে মারুফ রেজা নামে এক ব্যক্তির নাম আসায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ওই বছরের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় আদালত। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা (১০৪২/১৯৯১) করেন মারুফ রেজা, যিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়।
১৯৯১ সালের ২ জুলাই ওই তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। ১৯৯২ সালের ২৭ আগস্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে মর্মে আরেকটি আদেশ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এটি রাষ্ট্রপক্ষকে অবহিত করে। এরপর এ মামলা শুনানির উদ্যোগ নেয়া। শুনানি শেষে বুধবার মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।