পাবনার সিরাপ খেয়ে নওগাঁয় মাকে হত্যার পর মেয়েকে ধর্ষণ
পাবনার একটি প্রতিষ্ঠানের যৌন উত্তেজক সিরাপ পান করে নওগাঁয় মাকে হত্যার পর মেয়েকে ধর্ষণ করার ঘটনা সারা দেশে আলোচিত। পাবনার সেই যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে নওগাঁ জেলার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার গভীর রাতে তাঁরা অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর কারখানাটি সিলগালা করে দেয়।
গত কয়েক বছর ধরে একটি চক্র পাবনার বিভিন্ন স্থানে ফ্রুট সিরাপের নামে যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই চক্র তাদের কথিত সমিতির ব্যানারে ‘মাসোহারার’ নামে লাখ লাখ টাকা প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর তাদের উৎপাদিত এইসব যৌন উত্তেজক সিরাপ খেয়ে বেকার যুবক থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এই সিরাপের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং অকালে মারা যাচ্ছে।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিমন রায় বলেন, সম্প্রতি নওগাঁতে পাবনার আফুরিয়ার ফাস্ট ফিলিংস ইন্ডাস্ট্রি প্রাইভেট লিমিটেডের তৈরিকৃত যৌন উত্তেজনা বর্ধক ‘ফাস্ট কিংস আপ ফ্রুট সিরাপ’ পান করার পর এক যুবক মাকে হত্যার পর মেয়েকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। মঙ্গলবার রাতে পাবনার ডিবি পুলিশের সহায়তায় নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পাবনা সদর উপজেলার আফুরিয়া ফাস্ট ফিলিংস নামের ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে রাজা মিয়া (৩৩), নজরুল ইসলাম (৩৭) ও কাদের (৩৫) নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সেই সঙ্গে কারখানা সিলগালা করা হয়। একই সঙ্গে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই কোম্পানির বিপুল পরিমাণ মালামাল জব্দ করা হয়। ‘এটা মূলত বিষ, টাকার হিসাবে কত ক্ষতি তা বলা মুশকিল’ বলেও জানান পুলিশ সুপার।
লিমন রায় জানান, পাবনার ফাস্ট ফিলিংস কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে হট ফিলিংসসহ তিনটি আইটেমে যৌন উত্তেজক পানীয় তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মুদির দোকানে বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। কারখানার স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ম্যানেজ করে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক যৌন উত্তেজক পানীয় তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কারখানার মালিক পাবনার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এই কারখানার উৎপাদিত হট ফিলিং যৌন উত্তেজক পানীয় সেবন করে নওগাঁয় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে অতি মুনাফার জন্যে পাবনায় একটি চক্র এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। তারা ২২ জনের একটি সমিতি করে এই উত্তেজক সিরাপ তৈরি ও বাজারজাত করছেন।
এ ব্যাপারে পাবনা চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ড্রাগের চেয়েও ক্ষতিকর এই সিরাপটি পাবনার অন্তত অর্ধশত কারখানা রয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তারা এই সিরাপ তৈরি করে আসছেন। এই পণ্যটির ভোক্তা হলো ট্রাক চালক, রিকশাচালক থেকে শুরু করে বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে পাবনার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, এ ধরনের মান নিয়ন্ত্রণহীন যৌন উত্তেজক সিরাপ সেবনে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা দেখা দিলেও দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে লিভার, কিডনি ড্যামেজের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে সেবনকারীরা। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারীর দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে পাবনার ফাস্ট ফিলিংস কারখানার মালিক আবদুর রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার মন মানসিকতা ভালো নেই। একটু সহযোগিতা করার জন্যেও অনুরোধ জানান তিনি।
পাবনা রির্পোটার্স ইউনিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, এই সিরাপ তৈরি কারখানা মালিকরা দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে। কারখানা মালিকদের ওই চক্র এতোটাই প্রভাবশালী যে, প্রতিদিন বিকেলে শহরের বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের সামনে গেলেই দেখা যায় তারা শত শত কার্টন ভরে ওই সিরাপ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন। যুব সমাজকে রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাবনার আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা এ ধরনের কারখানা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পাবনার সচেতন মহল।
পাবনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. দোলোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পাবনার একটি কোম্পানির যৌন উত্তেজক সিরাপ খেয়ে নওগাঁয় মাকে হত্যার পর মায়ের লাশের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করে এক যুবক। এ ঘটনায় তিনজনকে পাবনার ওই কারখানা থেকে গ্রেপ্তার করে নওগাঁয় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।