দুদকের চিঠি প্রত্যাহার করতে সাংবাদিকদের আলটিমেটাম
সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দুই সাংবাদিককে দেওয়া দুদকের চিঠির প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাধারণ সাংবাদিকরা। দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়েছেন তাঁরা।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাধারণ সাংবাদিকরা এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতাকালে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য দাবিগুলো তুলে ধরে এ ঘোষণা দেন।
দাবিগুলো হলো−দুদক যে আপত্তিকর ভাষায় চিঠি দিয়েছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, দুদকের দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে, যিনি চিঠি ইস্যু করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।
আবু জাফর সূর্য বলেন, ‘সত্য প্রকাশে কোনোভাবেই সাংবাদিকদের বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিতে হবে। আমাদের দাবিগুলো ২৪ ঘণ্টার ভেতরে বাস্তবায়ন করতে হবে দুদককে। না হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ের সামনে ফের সমবেত হবেন সাংবাদিকরা।’
সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিপু সারোয়ার বলেন, ‘দুদক আইন, তাদের যে বিধিমালা এবং ফৌজদারি কার্যবিধি উল্লেখ করে আমাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেটি আসলে সমন পর্যায়ে পড়ে। আপনি হাজির হবেন, না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার রিপোর্টকে কেন্দ্র করে তারা যদি তথ্যগত সহযোগিতা চায় তাহলে চিঠির ভাষা এমন হতে পারে না। আমার সহকর্মী, অফিস এবং সাংবাদিক বন্ধুরা বিষয়টিকে অত্যন্ত অপমানজনক হিসেবে দেখেছেন। সেজন্যই আমি আজকে দুদকের মুখোমুখি হইনি। আমি যথা উপযুক্ত তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করেছি। সাংবাদিকতার সব নৈতিকতা মেনে আমি খবরটি প্রকাশ করেছি। দুদক কিন্তু আমার এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। তারা আমাকে কেন ডেকেছে তা আমি জানি না।’
সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দুদকের পক্ষ থেকে দুজনকে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের জন্য যে চিঠি ইস্যু করা হয়েছিল সেই চিঠির ভাষা দুই জায়গায় দুই রকম। বিষয়টি কমিশনের নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কমিশন। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
গত সোমবার দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠানো হয় এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমনকে। নোটিশটিতে বলা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৬/০৬/২০১৯ তারিখ ১০.০০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
পরের দিন গতকাল মঙ্গলবার শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত একই চিঠি পাঠানো হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দিপু সারোয়ারকে। তাঁকেও আজ বুধবার দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয়। তবে তাঁর নামে পাঠানো নোটিশের শেষ বাক্যে বলা হয়, ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’ ইমরান হোসেন সুমনকে শুধু কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদান করতে অনুরোধ জানানো হয়। উপস্থিত না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু দিপু সারোয়ারকে বলা হয়েছে।