কাদেরের আশ্বাসের এক মাসেও সমস্যার সমাধান হয়নি ছাত্রলীগের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাসের প্রায় এক মাসেও দলটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের সমস্যার সমাধান হয়নি। সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের পদ পাওয়াসহ নানা অভিযোগ এনে তা পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এতে স্থান না পাওয়া ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা।
কমিটি ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে নিজেদের মধ্যে মারামারি লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলার শিকার হয় একাধিক নারী নেত্রীও।
এরপর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন বিক্ষুব্ধরা। এরপর ২৯ মে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করেন। কিন্তু এ পদগুলোতে কারা বাদ গেছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের নিয়ে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। এই কারণে ২৬ মে আবার আন্দোলন শুরু করেন বিক্ষুব্ধরা।
এরপর গত ঈদুল ফিতরের আগে ১ জুন ছাত্রলীগের আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই দিন তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পুনর্গঠনের আন্দোলনের সমাধান খুব শিগগিরই হবে।
ওই সময় কাদের আরো বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগের কমিটির ব্যাপারে নেত্রী আমাদের দলের চারজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন; তাদের কমিটি গঠন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানে। তাদের সঙ্গে আমার কথাবর্তা হয়েছে। যোগাযোগ হচ্ছে। যারা আন্দোলন প্রতিবাদ করছে, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমি আশা করি বিষয়টি অচিরেই সমাধান হবে।’
কিন্তু আজ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে আজ তাঁরা সেখানে মুখে কালো কাপড় বেঁধে ঘৃণা প্রদর্শন করে প্রতীকী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। দাবি মানা না হলে অবস্থা বিবেচনা করে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের হুমকিও দেন তাঁরা।
জানতে চাইলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছাত্রলীগের গত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, ‘কাদের ভাই সংবাদমাধ্যমে বলার পরও বিষয়টি নিয়ে শোভন-রাব্বানী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। কারণ তাঁরা যদি বিতর্কিতদের বাদ দেন, তাহলে শোভন-রাব্বানীর অনেক গোপন তথ্য ফাঁস হবে। আর তখন তাদের নিজের কমিটিই থাকবে না। তাই নিজেদের বাঁচাতে ছাত্রলীগকে কলঙ্কিত করছে তারা, যেটা আমরা কখনোই হতে দেব না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন বলেন, আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করতে নির্দেশনা দেওয়ার পরও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠনকে বিতর্কিতমুক্ত করতে চায় না, তাদের প্রতি ধিক্কার, ঘৃণা।
সুমন আরো বলেন, যদি অচিরেই বিতর্কিতদের বাদ না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আমরণ অনশনের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
চার দফা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া, যোগ্যদের কমিটিতে পদায়ন এবং মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে পদবঞ্চিতদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দাবি আমাদের। এসব দাবিতে আমরা টানা ৩১ দিন ধরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। কিন্তু ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে আমাদের কোনো খবরই নেওয়া হয়নি।