ইদানীং আবার জঙ্গিবাদের হুমকি অনুভব করছি
রাজধানীর ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের কাজটিতে ভাটা পড়ায় ফের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদী হামলার হুমকি অনুভব করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
কমিশনার বলেন, ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিআইএমএস) মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করার কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ইদানীং আমরা লক্ষ করছি, তথ্য সংগ্রহের কাজটি ঢিলা হয়ে গেছে। অনেক ভাড়াটিয়া বা নাগরিকরা এখন তথ্য দিচ্ছে না। আমাদের পুলিশের মধ্যেও একটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করছি। যে কারণে ইদানীং আমরা আবার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের একটি হুমকি অনুভব করছি। এই প্রেক্ষাপটে কাজটি আমরা আবার শুরু করেছি।’
আজ শুক্রবার থেকে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত তথ্য না দেওয়া ভাড়াটিয়াদের পুনরায় তথ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে ডিএমপি। এতে বাড়ি ভাড়া করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা ঢাকায় আশ্রয় নিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। বেলা ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ‘নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য জানান।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ডিএমপির প্রত্যেকটি থানার যে সাত-আটটি করে বিট রয়েছে, সেই বিটভিত্তিক কাজগুলো আমরা ভাগ করে দেব। যে বিটে আট-দশজন পুলিশ দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন তাঁরা ওই এলাকায় প্রত্যেকটি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করবেন। সবার সঙ্গে কথা বলে যারা এই ফরম জমা দেয়নি তাদেরকে ফরম সরবরাহ করবেন এবং তথ্য নিয়ে এসে আমাদের সিস্টেমে সংযুক্ত করবেন।’
নগরবাসীকে তথ্য দিতে অনুরোধ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনার তথ্য পুলিশের কাছে জমা দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করুন, নিজে নিরাপদ থাকুন, নগরবাসীকে নিরাপদ রাখুন। পুলিশ ও নাগরিকদের যৌথ অংশীদারির ভিত্তিতে টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।’
‘এরই মধ্যে নন-অফিশিয়ালি আমরা ২০১৫ সালের শেষ দিক থেকে নাগরিকদের তথ্য ফরম সংগ্রহের কাজ শুরু করি। আর অফিশিয়ালি এই কাজটি আমরা শুরু ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। আমরা ২২ লাখ পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করেছি। যেখানে প্রায় ৬৩ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এই তথ্য ফরমগুলো সংগ্রহ করে আমরা একটি অত্যন্ত কার্যকর সফটওয়্যার তৈরি করি, যেটির নাম ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস’।’
ঢাকা মহানগরীর পুলিশ-প্রধান বলেন, ‘এই সিস্টেমে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি ইউনিক ইনডেক্স নম্বর দেওয়া হয়েছে। ওই নাগরিক যদি এক থানা থেকে অন্য থানা এলাকায় বাসা বদল করে তাহলে ইনডেক্স নম্বর ট্র্যাকিং করে আমরা তাঁর অবস্থান নিশ্চিত হতে পারব। এ ছাড়া সে অতীতে যেসব বাসায় ছিল সেই তথ্য আমরা জানতে পারব এবং এই পরিবারের সদস্য কারা, পেশা কী কিংবা বয়স কি, তা আমরা জানতে পারব।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এই সিস্টেমে আমরা যেসব তথ্য পাব সেই তথ্য অপরাধ দমন, প্রতিকার, উদঘাটন এবং নাগরিক নিরাপত্তার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আমরা বলতে পারব। আপনারা দেখেছেন পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলাপর পর ঢাকা মহানগরীতে কোনো জঙ্গি অপতৎপরতা হয়নি, এটির কারণ হলো নাম-ঠিকানা গোপন করে কেউ ঢাকা মহানগরিতে কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গি বাসা ভাড়া নিতে পারেনি। কারণ, বাসা ভাড়া নিতে গেলেই তাঁকে নাগরিক তথ্য ফরম পূরণ করতে হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হয় এবং ছবি দিতে হয়। এসব কারণে তারা নিজেদের হাইড করতে পারেনি। বাইরের অন্য শহরগুলোতে ঢাকার অনুকরণে এই তথ্য ফরম সংগ্রহের কাজটি শুরু হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের মতো একটি সুদৃঢ় ও টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনের জন্য আমাদের এই নগরের প্রাথমিক ডাটাবেজ ভীষণ জরুরি।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য আদালতের একটি নির্দেশ ছিল, নাগরিকদের নিরাপত্তা বা অপরাধ দমনের জন্য ডিএমপি এই তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষরণ করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হলো নাগরিকের তথ্য গোপন রাখতে হবে। আমরা আদালতের সেই নির্দেশনা মেনে চলছি। গত তিন বছরে কোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার হয়নি। আর এটি যাতে না হয় সেদিকে আমাদের পর্যাপ্ত লক্ষ আছে।’
আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, ‘শুধু জঙ্গি অপতৎপরতা নয়, এসব তথ্যের সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের ফলে আমরা অনেক হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি এবং অপহরণ উদঘাটন করতে পেরেছি এবং আমাদের অপরাধ উদঘাটনের পারসেন্টটেন্স শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি। এটির কারণ নাগরিক ডাটাবেজের তথ্য এবং ডিজিটাল তথ্য মনিটরিং সিস্টেম ব্যবহার করা।’