বাসে অপরিচিত নারীর সঙ্গে গল্প, পরে অপহরণের শিকার
ঈদের ছুটি শেষে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা ফিরছিলেন রুবেল মিয়া (২০)। সিঙ্গাপুর যাওয়ার ইচ্ছে তাঁর, তাই রাজধানীতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ক্লাস করেন তিনি। বাসে দুই নারীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। রুবেলকে তাদের ভাইয়ের মতো দেখায় বলে সখ্যতা গড়ে তোলে তারা।
এরপর ওই দুই নারীর আবদার গাজীপুরে তাদের বাড়ি যেতেই হবে রুবেলকে। এমনকি সন্ধ্যায় বাস গাজীপুরের চান্দনায় পৌঁছালে ওই দুই নারী রুবেলকে বাস থেকে নামায়, নিয়ে যায় নিজেদের বাসায়।
বাসায় গিয়েই রুবেল বুঝতে পারেন অপহরণের শিকার হয়েছেন তিনি। তাঁকে মারধর করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ওই অপহরণ চক্র।
গত রোববার ওই ঘটনা ঘটে। অপহরণের ৩২ ঘণ্টা পর রুবেলকে গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের চান্দনা এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে নেত্রকোনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। একই সঙ্গে ওই অপহরণচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে ডিবি।
আজ বুধবার নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসব কথা জানান ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম। রুবেল নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটী ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল্লাহর ছেলে।
আটক দুজন হলো, ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার ছয়আনী নামাপাড়া গ্রামের পাভেল মিয়া (২৫) ও পাগলা উপজেলার ডিক্রীভূমি গ্রামের সুজন উদ্দিন অপু (২৫)।
নেত্রকোনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ‘রুবেল মিয়া সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য ঢাকার একটি ট্রেনিং সেন্টারে সিলিং বোর্ড তৈরির তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
ঈদের ছুটি শেষে গত রোববার বিকেলে তিনি বাসযোগে ঢাকায় ফিরছিলেন। বাসের মধ্যেই অপহরণ চক্রের দুই মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা তাকে ভাইয়ের মতো দেখতে বলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে তুলে। বাসটি সন্ধ্যায় গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় পৌঁছালে দুটি মেয়ে রুবেলকে তাদের বাসায় থেকে পরের দিন ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে তাকে বাস থেকে নামিয়ে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে রুবেলকে নিয়ে গিয়ে আটকিয়ে মারধর করে তার বাবার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা চাওয়ায় রুবেলের অসহায় বাবা আব্দুল্লাহ সোমবার সকালে নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের সহযোগিতা কামনা করেন।’
জানা যায়, পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিবি পুলিশের একটি টিম মুক্তিপণের টাকা নিয়ে গত মঙ্গলবার চান্দনা চৌরাস্তায় পৌঁছে মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণ চক্রের দুই সদস্য পাভেল ও অপুকে আটক করে। পরে তাদের দেখানো মতো চৌরাস্তা ঈদগাহ মাঠের পাশে একটি বাসা থেকে রাত ৩টার দিকে অপহৃত রুবেল মিয়াকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত দুই নারী পালিয়ে যায়।
নেত্রকোনার ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ নূর-এ-আলম জানান, এ ব্যাপারে অপহরণ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।