বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারের জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর আদালত স্থানান্তর করে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ সোমবার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য থাকলেও মামলার নথি দাখিলের জন্য সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আগামীকাল শুনানির দিন ধার্য করেন।

আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও মীর হেলাল উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আগেও এই রিটের শুনানি হয়েছে, আজও শুনানির জন্য ছিল। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র দাখিল করতে চেয়েছিলাম। সেই কাগজপত্রগুলো দাখিল করতে হলে আগে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। আদালত সেই অনুমতি দিয়েছেন। এখন সেগুলো অ্যাফিডেভিট করে দাখিল করতে হবে।

‘যেহেতু অ্যাফিডেভিট করতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যাবে, সেহেতু আমরা বলেছি শুনানিটা আজ না করে আগামীকাল করলে ভালো হয়। আদালতও সম্মত হয়েছেন। ফলে আগামীকাল শুনানি হচ্ছে’, যোগ করেন আইনজীবী।

গত ২৬ মে খালেদা জিয়ার পক্ষে রিট দায়ের করেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

রিট আবেদনে সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদবহির্ভূত পদক্ষেপ হওয়ায় এবং প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৯ এর (১) ও (২) উপধারাবিরোধী হওয়ায় নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিচারে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ জজ আদালত-৯ কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই নম্বর ভবনে স্থানান্তরে গত ১২ মে জারি করা গেজেটকে কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

এর আগে গত ২১ মে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। তার জবাব না পাওয়ায় এ রিটটি দায়ের করা হয়।

ওই আইনি নোটিশে বলা হয়, গত ১২ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে, খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য পুরাতন ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালত (বিশেষ জজ আদালত-৯) স্থানান্তর করে কেরানীগঞ্জে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই প্রজ্ঞাপনকে খালেদা জিয়া ও আমরা বেআইনি বলে মনে করি। কারণ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোনো বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না।

গত ১৪ মে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নবনির্মিত ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে প্রথমবারের মতো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা গ্যাটকো মামলার শুনানি হয়। এর আগে ১২ মে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নবনির্মিত ২ নম্বর ভবনের অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

এই প্রজ্ঞাপন জারি করার পর এরইমধ্যে এই আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলার শুনানি হয়েছে। অন্য দুটি হলো নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। তবে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁকে এখনও এই আদালতে হাজির করা হয়নি।

দুটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছর) কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি আছেন খালেদা জিয়া। সাজা হওয়ার পর থেকে তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডে সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনে রাখা হয়। সেখানেই একটি কক্ষে আদালত বসানো হয় তাঁর মামলার বিচারের জন্য। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।