‘শ্বশুর-শাশুড়ি ধরে রেখেছে, স্বামী আগুন দিয়েছে’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর পরিবার পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এরা হলেন উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের কুর্শিপাড়া গ্রামের হাছেনা খাতুন, দেবর মিজানুর রহমান ও হোমিও চিকিৎসক ফারুক মিয়া। গত শনিবার ময়মনসিংহের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাহবুবা আক্তারের আদালতে তিন আসামিকে হাজির করা হয়। এর মধ্যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ফারুক মিয়া।
অপরদিকে অন্য দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। গতকাল রোববার আদালতে শুনানি শেষে হাছেনা খাতুন ও মিজানুর রহমানকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন হাছেনা খাতুনের ছেলে শরিফ মিয়া এবং তাঁর বাবা শাহাব উদ্দিন।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমদ কবির হোসাইন বলেন, উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমারুলি গ্রামের আব্দুল হাই বাদী হয়ে গত ৫ জুন এই মামলাটি করেন। মামলায় তিনি তাঁর মেয়ে শিরিনা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ এনেছেন। শিরিনা দগ্ধ অবস্থায় এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরই মধ্যে মামলার এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তার পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক রাজিব কর্মকার বলেন, আগুনে শিরিনার শরীরের বামদিকের একটি অংশ পুড়ে গেছে। শরীরের অন্যান্য অংশও দগ্ধ হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রায় সাত মাস আগে শিরিনার সঙ্গে শরিফ মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শরিফ যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন। মারধরও করতেন।
‘গত ১ জুন শরিফ বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য শিরিনার উপর চাপ তৈরি করে। শিরিনা এতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন শিরিনাকে মারধর করা হয়।’
মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাবা-মা ও ভাইয়ের সহায়তায় শিরিনার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন শরিফ। প্রতিবেশীরা টের পেয়ে ছুটে আসেন এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এরপর অগ্নিদগ্ধ শিরিনাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘরে আটকে রেখে হোমিও চিকিৎসা দেওয়া হয়।’
শিরিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাঁচদিন পর (গত শুক্রবার) শিরিনার বাবা খবর পেয়ে ছুটে আসেন এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করেন বাদী।