চিড়িয়াখানায় ‘চকলেটবাজী’
ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় খালাতো ভাই-বোনদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পরশ (২২)। ডেমরা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চিড়িয়াখানায় আসতেই তিনি এক অদ্ভূত বিড়ম্বনায় পড়েন। সিএনজি চিড়িয়াখানার কাছাকাছি যেতেই কয়েকজন যুবক তাদেরকে ঘিরে ধরে এবং জোর করে ডেইরি মিল্কের চকলেট গুঁজে দেয়।
পরশ তাদের এই অদ্ভূত আথিথেয়তায় অবাক! চকলেট দিয়েই তাঁর কাছে দাবি করা হলো ৫০০ টাকা। চকলেট বাবদ এ টাকা তাদের দিতেই হবে। পরশ যুবকদের হাবভাব দেখে বলেন, দুইটি চকলেটের দাম বড় জোর ২০ টাকা হবে, কিন্তু ৫০০ টাকা দিতে হবে কেনো? প্রশ্ন শুনেই বখাটে এ যুবকরা তাঁর খালাতো বোনকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা শুরু করে দেয়।
তাদের কথায় বিব্রত হয়ে পরশ চকলেটগুলো ফিরিয়ে দিতে চান। কিন্তু যুবকদের দাবি, টাকা না দিলে সিএনজি সামনে যাবে না এবং তাদেরকে ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পরে সিএনজি চালকের মধ্যস্ততায় যুবকদের ১০০ টাকা দিয়ে পার পান পরশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের দ্বিতীয় দিন মিরপুরের চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। সেখানে কয়েকজন যুবক ‘ডেইরি মিল্ক’ চকলেট বিভিন্ন সিএনজির ফাঁক দিয়ে যাত্রীদের দিয়ে টাকা দাবি করছে। আর যুবক-যুবতীদের টার্গেট করে বেশি টাকা দাবি করা হচ্ছে। না দিলে আপত্তিকর ভাষায় ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ভূক্তভোগী পরশ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুটি চকলেটের দাম ২০ টাকার বেশি হবে না। কিন্তু আমার থেকে ৫০০ টাকা দাবি করা হয়েছে। পরে সিএনজিচালকের মধ্যস্ততায় ১০০ টাকা দিয়ে আসতে পেরেছি।’
পরশ বলেন, তিনি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন। ঈদে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে যা সেলামি পেয়েছেন তা দিয়েই খালাতো ভাই-বোনদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু চিড়িয়াখানায় এসে ডাকাতির কবলে পড়লাম। খুব বাজে ভাষায় কথা বলেছে আমাদের। চকলেট ফিরিয়ে দিতে চাইলাম তারপরেও তারা টাকা ছাড়া সিএনজি ছাড়েনি। প্রশাসন এগুলোতে নজর না দেওয়াতে এরা পরিকল্পিতভাবে চাঁদাবাজী করছে।
পরশদের সিএনজিচালক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘১০ টাকা দিয়ে চকলেট কিন্না মানুষরে ঠকাইতেছে এরা। পার্কিং ইজারাদাররা এতে জড়িত আছেন। পুলিশের সামনে দিয়া এ কাজ করে কিন্তু পুলিশ এদের কিছুই বলে না।’
পরশ ছাড়াও নিত্য নামের আরেক নারী একই ধরনের বিপদে পড়েছেন চিড়িয়াখানায়। তাঁর কাছেও চকলেট দিয়ে টাকা দাবি করা হয়েছে। পরে দুইশ টাকা দিয়ে কোনোরকমে বেঁচে এসেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার ইজারাদার ইদ্রিস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের পার্কিংয়ের কোনো লোক এমন কাজ করে না। বাইরের কিছু মাদকসেবী এ কাজ করে থাকে। তাদের আমরা অনেকবার ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছি। কিন্তু পুনরায় তারা এ কাজই করে। এখন আমরা আবার অভিযান করছি। তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিবো।’
চিড়িয়াখানায় ভাসমান আইসক্রিম বিক্রেতা সাদ্দাম জানান, ‘ঈদের সময় এদের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। জোয়ান পোলা-মাইয়া পাইলেই তাগো কাছ থেকে জোর কইরা টাকা নেয়। ইজ্জতের ভয়ে পোলা-মাইয়াও টাকা দেয়। এগোরে থামানোর কোনো রাস্তা নাই।’