প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত
প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাতে প্রায় দুই লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে ধারণা আয়োজকদের।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট পর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ঈদুল ফিতরের ১৯২তম জামাত শুরু হয়। জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
২০১৬ সালে জঙ্গি হামলা এবং সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষে শোলাকিয়ায় চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকা ছিল সিসি ক্যামরার নজরদারিতে। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ কয়েক দফায় তল্লাশি করা হয়। শহরের অলিগলিতে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। মাঠের ৩২টি প্রবেশ পথে চেকপয়েন্ট বসিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হয়।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে রেওয়াজ অনুযায়ী শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়েন পুলিশ সদস্যরা। ছবি : এনটিভি
ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চলাচল করেছে দুটি স্পেশাল ট্রেন। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে।
গতকাল রাত থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে জামাত অনুষ্ঠান পর্যন্ত। কিন্তু বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভোর থেকেই হাজার হাজার মুসল্লির পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ঈদগাহমুখী সব সড়ক। সকাল ৯টার অগেই কানায় কানায় ভরে যায় শোলাকিয়া মাঠ। মাঠে স্থান না পেয়ে বহু মুসল্লিকে মাঠের আশপাশের রাস্তাগুলোতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।
রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।