রাঙামাটিতে ভবন নির্মাণকালে মাটিচাপা পড়ে তিনজন নিহত
রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই হ্রদের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ভিত নির্মাণের সময় মাটিচাপা পড়ে তিনজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো এক শ্রমিক। আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে শহরের রিজার্ভবাজারে সরকারি মহিলা কলেজের প্রবেশ মুখে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন সেন্টু মিয়া (৪১), আঙ্গুর আলী (৬৫) ও মো. পাপ্পু মিয়া (৩৫)। আহত সাইফুলের বয়স ৪০।
রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার উদয়ন চাকমা হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাদের রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উদয়ন চাকমা জানিয়েছেন, নির্মাণ শ্রমিকরা কোনো ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাটি কাটার কাজ করছিলেন। ফলে মাটি কাটতে কাটতে যখন বড় গর্ত তৈরি হয়, তখনই ওপর থেকে মাটি ধসে পড়ে এবং এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই হ্রদের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ভিত নির্মাণের সময় আজ রোববার মাটিচাপা পড়ে তিনজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন। ছবি : এনটিভি
রাঙামাটি পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর করিম আকবর জানিয়েছেন, দুপুর ১টার পর মহিলা কলেজের পাশেই পারভীন নামের এক স্কুলশিক্ষিকার নির্মাণাধীন ভবনের ভিত নির্মাণের মাটি কাটার সময় মাটিচাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা গেছেন। দ্রুত ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
ভবনটির মালিক পারভীন আক্তার রাঙামাটি পৌর এলাকার কাটাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তিনি জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম উদ্দিন ও মহিলা আওয়ামী লীগের পৌর কমিটির সভাপতি জ্যোৎস্না আক্তারের ছোট বোন। একই সড়কে তাঁদের ভাইবোনের সবার বাসভবনই কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল করে নির্মিত হয়েছে। বছর দুয়েক আগে একই এলাকায় পৃথক আরেকটি ভবনধসের ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় যে, মহিলা কলেজের সড়কের পাশে একটি কাঁচাঘরকে আড়াল রেখে নিচ থেকে অন্তত ৩০ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে ভবন নির্মাণের কাজ করছিলেন পারভীন আক্তারের নিয়োজিত শ্রমিকরা। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবেই মাটি কাটার এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন ১১ জন শ্রমিক। ভবনটির কয়েকটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে পুরোটাই কাপ্তাই হ্রদের ওপর। হ্রদের পানি কম থাকার সুযোগে এই কাজটি করেছেন নির্মিতব্য ভবন মালিক।
রাঙামাটি শহরে কাপ্তাই হ্রদের ওপর অবৈধভাবে নির্মাণাধীন একটি ভবনের ভিত নির্মাণের সময় আজ রোববার মাটিচাপা পড়ে তিনজন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ছবি : এনটিভি
দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হ্রদ দখল করে ভবন নির্মাণে বিস্ময় প্রকাশ করে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ। তিনি জানিয়েছেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা বলব। এই ভবন মালিকের বিরুদ্ধে অবশ্যই হত্যা মামলা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, হ্রদ দখল করে ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এদিকে এই দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা ও আহতকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।