যান্ত্রিক মন পারিবারিক হয়ে উঠেছে
আকাশ মণ্ডল (৩৪) ঢাকায় থাকেন ১৫ বছর ধরে। গ্রামের বাড়ি যশোর। পড়েছেন ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। চাকরি করেন একটি ওষুধ কোম্পানিতে। কাজের চাপে যান্ত্রিক হয়ে উঠেছেন আকাশ। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পান না। কথা বলারও সময় হয় না সব সময়। অন্যদিকে পারেন না বাবা-মাকে ঢাকায় রাখতে।
মা মাঝে মধ্যেই আকাশকে ফোনে ‘পাষণ্ড’ বলেন। বোনও কটাক্ষ করে আকাশকে ‘বড় লোক’ বলে ডাকেন। পরিবারের আরো কত শত অভিযোগ। তবে কেউ আকাশকে বুঝতে পারেন না বলে তাঁর মত।
ঢাকার প্রথম জীবনে সবাইকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হতো আকাশের। তবে এখন মানিয়ে নিয়েছেন সব। মা-বাবা ও বোনকে ভালো মন্দ খেতে-পরাতে পারেন এতেই তৃপ্তি খোঁজেন আকাশ।
বছরে দুই ঈদে মাত্র দুবার যশোর যাওয়ার সুযোগ পান আকাশ। বাড়িতে না গেলেও মাসে মাসে টাকা পাঠান বাবা-মাকে। কখনো কেনাকাটা করেও পাঠান। তবে ঈদের দিন যত সামনের দিকে এগিয়ে আসে তত পারিবারিক হয়ে ওঠেন আকাশ। এই যেমন আজ, আকাশের দেহ ঢাকায় কিন্তু মন পরিবারে! বাড়িতে যাওয়ার আগের সময়গুলো যেন কাটতেই চায় না তাঁর।
শনিবার রাজধানীর কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সকাল ১০টায় যশোরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন আকাশ। যদিও সকাল সাড়ে ৮টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল। কল্যাণপুর কাউন্টারে আকাশ মণ্ডলের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তখন তিনি এসব কথা বলেন।
আকাশ মণ্ডল বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদে শেষবার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এর ভেতরে কতবার যে মায়ের কাছ থেকে পাষণ্ড শব্দটা শুনেছি তার ঠিক নেই। জীবনটা আসলেই যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। ঢাকার শুরুতে খুব খারাপ লাগতো মা-বাবাকে ছেড়ে থাকতে। তবে এখন সব মানিয়ে নিয়েছি। তবে মায়ের মুখে যখন পাষণ্ড কথাটা শুনি, তখন ভেতরটা কেপে ওঠে! ভাবি, আমি কি আসলেই অন্যদের মতো মাকে ভালোবাসি না!’
আকাশ বলেন, ‘ভালো জীবনের জন্য ঢাকায় এসেছি। ভালো জীবন পেলেও পুরো যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি। মায়া-মমতাও বোধহয় কমে গেছে। তবে শুধু অর্থ দিয়ে হলেও যে মা-বাবা ও বোনকে ভালো রাখতে পেরেছি এতেই আমার স্বস্তি। এ ছাড়া যে আসলেই আমার কিছু করার নেই। কিন্তু মা-বাবার জন্য মনটা কেঁদে ওঠে কখনো-কখনো। গত এক সপ্তাহ ধরে মা প্রতিদিন জানতে চান, গাড়িতে কখন উঠছি।
আজ বাড়িতে যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। কয়েকদিন ধরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে একদম। মাথায় পরিবার ঢুকে গেছে। অন্য কিছু নিতে পারছি না। পরিবার ছাড়া আসলেই কিছু নেই আমার। তাই ঈদের জন্য হলেও যান্ত্রিক মন আজ পুরোটাই পরিবারিক হয়ে উঠেছে। আজ ঈদকে ধন্যবাদ জানাতে ইচ্ছে করছে। ঈদই সুযোগ করে দেয় মা-বাবাকে দেখার সুযোগ করে দেয়।’
এ ছাড়াও গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামে যাচ্ছেন অনেকে। এদের ভেতরে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে এনটিভি অনলাইন। বাসে উঠার আগে সবাইকে বেশ খুশি দেখা গেছে।
এদের ভেতরে নাসিমুল হোসেন নামের একজন বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে গ্রামে যাচ্ছি। মা-বাবা, ভাই-বোনকে দেখতে পাব। শহরে যান্ত্রিকতা ছেড়ে একটু গ্রামের মায়া-মহব্বত গাঁয়ে মেখে আসি।’
ফারহিন সোহানা নামের এক শিক্ষার্থী যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন বাড়ি যাওয়া হয় না। এবার বাড়ি দিয়ে অনেক দিন কাটাব। মায়ের হাতের রান্না খাব। মায়ের কাছে থাকব। খুব ভালো লাগবে।’